চলতি বছর দিনাজপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে আমন ধান উৎপাদন। বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা। বর্তমানে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক। তবে মৌসুমের শুরুতেই ধানের দাম বেশি।
কৃষকরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার ধান উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি। দাম আরও বাড়লে সামনের দিনে আরও বেশি ধান চাষে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবেন বলে দাবি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলায় এ বছর দুই লাখ ৭১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদন হয়েছে। ফলে এবার দুই লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে।
সদর উপজেলার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘এ বছর দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। ভালো ফলন হয়েছে। দাম ভালো পাচ্ছি।’
হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে। গতবার ১৪-১৫ মণ ধান হলেও এবার প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ মণ পাচ্ছি। ফলন ভালো হলেও সার ও তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’
হিলির জালালপুর গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আগে একবিঘা জমিতে খরচ হতো সাত-আট হাজার টাকা। এবার সার, কীটনাশক, জমি চাষ ও শ্রমিক খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। ফলে বর্তমান দামে ধান বিক্রি করলে আমাদের তেমন লাভ হবে না।’
একই কথা জানিয়েছেন হিলির ছাতনি গ্রামের কৃষক আজাহার আলী। দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। আজাহার বলেন, ‘এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। জমিতে কীটনাশক ছিটাতে হয়েছে পাঁচ-ছয় বার। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সেইসঙ্গে ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। বাজারে ধানের মণ এক হাজার ২০০-৩০০ টাকা। এতে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে না। ধানের দাম এক হাজার ৫০০-৬০০ হলে লাভ হতো।’
ধানকাটা শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘গতবার প্রতিবিঘা জমির ধান কেটেছিলাম তিন হাজার টাকায়। এবারও প্রতি বিঘা জমির ধান কাটছি তিন হাজার টাকায়। যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে সেভাবে আমাদের মজুরি বাড়েনি। মজুরি বাড়লে আমাদের সুবিধা হতো।’
হিলি স্থলবন্দরের চারমাথা মোড়ের ধানের আড়তদার ওবায়দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। গতবার প্রতি মণ ধান ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় কিনেছি। এবার এক হাজার ২০০-৩০০ টাকা মণ কিনছি। এবার ধানের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে আরও বাড়তে পারে। নওগাঁ ও সেতাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন চালের মিলে আমরা ধান সরবরাহ করি।’
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলায় এবার আট হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় এক হাজার ২২৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি মণ ধান এক হাজার ২০০-৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।’
দিনাজপুর জেলা খাদ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার দিনাজপুরে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমন কাটা ও মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয় এই জেলায়। দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।’
দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান বেশি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ১০ শতাংশ ধান কাটা ও মাড়াই হয়ে গেছে।’