অভিবাসীদের জীবনে নানা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তার মধ্যে একটি হল প্রিয়জন, বা বন্ধুর মৃত্যু হলে পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে নানা রকম অনিশ্চয়তা। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ায় কীভাবে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন ও সম্পন্ন করা হয় তা জানা থাকাটা সবার জন্যে জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:
- কোনও প্রিয়জনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটলে নতুন অভিবাসীরা একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।
- ফিউনারেল ডিরেক্টর নিশ্চিত করেন যেন সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করা হয়।
- কোনও ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে যদি আরও তথ্যের প্রয়োজন হয়, তখন করোনারের সাহায্য নেয়া হয়।
- দি বার্থস্, ডেথস্, অ্যান্ড ম্যারেজেস রেজিস্ট্রি মৃত্যু সনদ তৈরি করা থেকে শুরু করে সংস্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কাছে এ সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ করা সহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে থাকে।
কোনও প্রিয়জনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটলে অভিবাসীরা নতুন একটি দেশে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।
মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা শোকের ভেতরে চলে যায় এবং ঘটনার আকস্মিকতায় তখন কী করতে হবে তা বুঝে উঠতে পারে না। অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মত এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়।Family at graveGetty Images/Phillippe Lissac
মেলবোর্নের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার বাসিন্দা ম্যাথিউ কুরিয়াকোস বলেন, কয়েক বছর আগে যখন তাঁর পরিবারের এক জনের মৃত্যু হয়েছিল, তখন তাঁরা জানত না এর পরে তাঁদের কীভাবে কী করা উচিৎ।
ম্যাথিউ কুরিয়াকোসের পরিবার এসেছে ভারতের কেরালা অঞ্চল থেকে। সেখানে তাঁরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রক্রিয়া যেমন দেখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় সেই আয়োজনের অভিজ্ঞতা তার থেকে বেশ আলাদা।
সিডনি ফিউনারেলস কোং-এর একজন পরিচালক স্কট ডানকোম্বে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রথম যে কাজটি করা উচিত তা হল একজন ফিউনারেল ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করা।
মি: ডানকোম্বে বলেন, এই অনিশ্চিত ও চ্যালেঞ্জিং সময়ে এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে কিছু না করাই শ্রেয়।
ফিউনারেল ডিরেক্টররা সাধারণত একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন করার জন্য সমস্ত কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টেশনের কাজ সম্পন্ন করেন।
দি বার্থস্, ডেথস্ অ্যান্ড ম্যারেজেস রেজিস্ট্রির সাথে ফিউনারেল ডিরেক্টর খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন এবং মৃত্যু নিবন্ধন করতে সাহায্য করেন।Japanese funeral sceneGetty Images
অমিত পাধিয়ার, যিনি নিউ সাউথ ওয়েলসে কর্মরত একজন অ্যাকটিং রেজিস্ট্রার, তিনি এই প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে বলেন, ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ হচ্ছে একটি সরকারী রেকর্ড যা কারও মৃত্যু সম্পর্কিত প্রমাণাদি সরবরাহ করে। মৃত ব্যক্তির সাথে পরিবারের অন্যদের সম্পর্কের প্রমাণপত্র হিসেবেও এটি কাজ করে।
আর কেউ মারা যাওয়ার পরে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সময়ে ডেথ সার্টিফিকেট অনেক কাজে লাগে।
ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, মৃত্যুর কারণ এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয় তদন্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। এ কাজগুলো করে থাকেন একজন করোনার।
ভিক্টোরিয়ার ডেপুটি স্টেট করোনার জ্যাকি হকিন্স করোনারদের কাজের তিনটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে বলেন, মৃতের পরিচয় সনাক্ত ও নিশ্চিত করা, মৃত্যুর কারণ জানা এবং মৃত্যুর সময়কালীন পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
মৃত্যুর সঠিক কারণ নিরুপণের জন্যে করোনার যখন নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো শেষ হওয়ার সময়ের উপরে নির্ভর করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনে কত সময় লাগবে।Funerals can be costlyGetty Images
মি: কুরিয়াকোস বলেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনের খরচ অনেক ক্ষেত্রেই ধারণাতীত বেশি হতে পারে।
ফিউনারেল ডিরেক্টর মৃত ব্যক্তির পরিবারের সাথে কথা বলে তাদের চাহিদাগুলি জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর সেই চাহিদা মোতাবেক সাশ্রয়ী মূল্যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন খুঁজে পেতে সহায়তা করেন।
মি: ডানকোম্বে বলেন, কয়েকজন ফিউনারেল ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে নেয়া জরুরি, যেন পরিবারের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতিনীতিগুলি সঠিকভাবে পালন করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে এরকম ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী আইন অনুযায়ী কারও মৃত্যুর পরপরই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা শুরু করতে হয় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে দাফন করতে হয়।
এরকম ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পরিবারের উচিৎ কোনও ইসলামী সংগঠন বা এমন কোনও ফিউনারেল ডিরেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যারা মুসলিম নিয়মে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজনে অভিজ্ঞ।Getty Images
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ডেপুটি স্টেট করোনার জ্যাকি হকিন্স বলেন, যদি করোনারের সংশ্লিষ্টতা থাকে তখন অভিবাসী এবং মাল্টিকালচারাল কম্যুনিটিদের এ সংক্রান্ত সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে, যেমন গ্রিফ কাউন্সেলিং এর জন্যে তথ্য সরবরাহ।
মৃত ব্যক্তি যদি এ দেশের নাগরিক না হয়ে থাকেন তাহলে তাঁর ভিসার উপর নির্ভর করে সে-সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিকতাও সারতে হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে তাঁর নিজ দেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করার দরকার হবে।
মি: ডানকোম্বে বলেন, ফিউনারেল ডিরেক্টর অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলে কাজ করেন যাতে এই প্রক্রিয়াগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়া নিশ্চিত হয়।
একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরে, তাঁর মৃত্যুর তথ্যটি সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে জানানো গুরুত্বপূর্ণ।
মি: পাধিয়ার বলেন, অস্ট্রেলিয়ান ডেথ নোটিফিকেশন সার্ভিস এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম যারা কোনও ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কে একাধিক সংস্থাকে অবহিত করতে সহায়তা করে থাকে।
ডেথ নোটিফিকেশান সার্ভিস যাদেরকে অবহিত করে থাকে এমন সংস্থার মধ্যে রয়েছে ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ, ইউটিলিটি অর্থাৎ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি, এবং বীমা ও অন্যান্য সরকারী সংস্থা।
এই প্ল্যাটফর্মটি ৫০টি ভাষায় অনুবাদ পরিষেবাও দিয়ে থাকে।