সন্ত্রাসী অভিযোগে নাগরিকত্ব খারিজ করে দেওয়াকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রুল জারি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার হাই কোর্ট। সিরিয়ার ‘আই-এস’ সংগঠনে যোগ দেওয়ার অভিযোগে দ্বৈত নাগরিক দেলিল আলেক্সান্দারের নাগরিকত্ব সরকার কেড়ে নেওয়ার জের ধরে হাই কোর্টের চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানি শেষে হাই কোর্ট এই রুল জারি করেন।
টার্কিশ-অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক দেলিল আলেক্সান্দার সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আই-এস’ এ যোগ দিয়েছেন অভিযোগে তার অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব খারিজ করা হয়েছিল। বিগত হোম এফেয়ার্স মিনিস্টার ক্যারেন অ্যান্ড্রুজ এর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা আপিল করা হয়।
মিস্টার আলেক্সান্দারের নাগরিকত্ব ৩৬-বি (36-B) ধারার মাধ্যমে খারিজ করা হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কারোর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া বা নির্বাসন দন্ড দেবার ক্ষমতা রাখেন।
আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে উপরোক্ত আইনের অংশবিশেষ রদ হওয়ার পাশাপাশি মিস্টার আলেক্সান্দারে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মিস্টার সামিন বলেন,
এই রায়ের মাধ্যমে আমার মক্কেল মিস্টার আলেক্সান্দারের নাগরিকত্ব বৈধ হিসাবে ঘোষিত হল। তিনি আর তার মত অনেকে যারা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তারা এই বিচারের রায়ে স্বস্তি ফিরে পাবেন।
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস এর শিক্ষক ও কনস্টিটিউশনাল লয়ার সঙ্গীতা পিল্লাই বলেন, হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। কেননা এই মামলাটির মত কয়েক ডজন মামলা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। অনেক অস্ট্রেলিয়ানের নাগরিকত্ব ৩৬-বি ধারায় বাতিল হয়েছিল।
অবশ্য ডক্টর পিল্লাই মনে করেন, যে নাগরিকত্ব হারানো অনেকে এই আইন বদলের খবর নাও জানতে পারেন। তারা হয়তো আবার অস্ট্রেলিয়ায় নাও ফিরতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার আইনে ৯০টিরও অধিক এমন বিধান আছে যার মাধ্যমে কারোর পাসপোর্ট বাতিল বা স্থগিত হতে পারে। তাই ৩৬-বি ধারাটি অকার্যকর হলেও অন্য আইনে একই পরিণতি হতে পারে।High Court decision ruling citizenship revocation illegal could affect othersGetty Images
এই রায়কে ২০১৫ সালে কোয়ালিশন সরকার প্রণীত সন্ত্রাস বিরোধী আইনের উপর মোক্ষম আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন মিস্টার দেলিলের আইনজীবীরা।
এদিকে বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে সাবেক হোম অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার ক্যারেন অ্যান্ড্রুজ মন্তব্য করেন,
“কোয়ালিশন সরকার অস্ট্রেলিয়ানদের সন্ত্রাসের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে যা যা করা দরকার তাই করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে লেবার সরকার কেবল বাগাড়ম্বর চালিয়ে যাবে নাকি যথোচিত পদক্ষেপ নেবে তা দেখা যাবে।”
এই বিচারের রায় নিয়ে নতুন এটর্নি জেনারেল মার্ক ড্রেফাস বলেন, “এই রায়ের ফলে অস্ট্রেলিয়ানদের কোন ক্ষতির আশংকা নেই।” তিনি আরও বলেন, “ভিন্নদেশের কেউ যাতে অস্ট্রেলিয়ানদের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্যে সরকারের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ আর আয়োজন ব্যবস্থা করা আছে।”
ধারণা করা হচ্ছে মিস্টার আলেক্সান্দার সিরিয়ার কোন বন্দিশালায় আছেন। তার হয়ে তার পরিবার এই মামলাটি কোর্টে এনেছে, তারাও গত এক বছরে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি।