Home International অস্ট্রেলিয়ায় বন্যার ঝুঁকি: যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন, যেভাবে প্রাণ বাঁচাবেন

অস্ট্রেলিয়ায় বন্যার ঝুঁকি: যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন, যেভাবে প্রাণ বাঁচাবেন

85
0

চলতি বছরের গ্রীষ্মকাল জুড়ে অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে গড় বৃষ্টিপাতের চাইতে অধিক বৃষ্টিপাত এবং ভয়াবহ বন্যা দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বন্যাপ্রবন এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্কাবস্থায় থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি:

  • কোন গাড়িকে গতিপথ থেকে দূরে ঠেলে দিতে বা ভাসিয়ে নেবার জন্য কেবল ১৫ সেন্টিমিটার গভীর পানির স্রোতই যথেষ্ট, তাই বন্যার পানিতে কখনোই গাড়ি চালাবেন না।
  • ‘লা নিনা’ পর্যায়ের কারণে এ বছরের গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ায় অধিক হারে বন্যা হচ্ছে।
  • বন্যা বা দূর্যোগে সাহায্যের জন্য স্টেট ইমারজেন্সি সার্ভিসে কল করুন ১৩ ২৫ ০০ নাম্বারে, বিপদে জরুরী সাহায্যের জন্য ০০০ (শূন্য শূন্য শূন্য) নাম্বারে কল করুন।

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো (ব্যুরো অফ মেটেরিওলজি- BOM) নিউ সাউথ ওয়েলসের বৃহত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ডে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। এই অঞ্চলে ‘লা নিনা’ পর্যায়ের কারণে গড়পড়তার চাইতে অধিক বৃষ্টি হচ্ছে।

১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ১৮ বার ‘লা নিনা’ পর্যায় পার করেছে। তার মধ্যে ১২ টি পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অংশে বন্যা হয়েছে।

আবহাওয়া ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ‘লা নিনা’ চলাকালে দেশের বৃহৎ এলাকাজুড়ে বর্ধিত মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দিনের বেলা শীতল থাকে এবং ঘন ঘন গ্রীষ্মমন্ডলীয় সাইক্লোন দেখা দেয়।

এ বছরের লা নিনার স্বল্পকালীন এবং দূর্বল হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। বিগত গ্রীষ্ম ঋতু থেকে চলমান লা নিনার জের এবং তারপর শীত ও বসন্তে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় বাঁধ বা জলাশয় ভরা ছিল। এ কারণে এবারের ‘লা নিনার’ প্রভাব ভয়ংকর হবে বলে সবাই আশংকা করছেন।Standing on the roof in the stormGetty Images/Colin Anderson Productions

বীমা সংস্থা এলায়াঞ্জ এর জরিপে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ানদের বন্যা প্রস্তুতির ঘাটতির পেছনে মূল কারণ হচ্ছে ‘লা নিনা’ সহ আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে অসেচতনতা।

সংস্থাটির ন্যাশনাল ক্লেইম ম্যানেজার মার্ক ও’ কনর জানান, গত বছর ঝড় ও বন্যার মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ান বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২.৪ বিলিয়ন ডলার।

আপদকালীন সময়ের জন্য পুর্বপ্রস্তুতি

প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রস্তুতির শুরুতেই সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দরকার, তাই মিস্টার ও’ কনরের মতে সবাইকে জরুরী সহায়তা সংস্থাসহ প্রতিবেশি বা কমিউনিটির কাছ থেকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিষয়ে যতটা সম্ভব জেনে নিতে হবে।

ইন্স্যুরেন্স পলিসি প্রতি বছর আবার দেখার পাশাপাশি তিনি সবাইকে জরুরী পরিস্থিতিতে গৃহ নিরাপত্তা কেমন হবে তার ছক করার পরামর্শ দেন তিনি।Tropical downpour Getty Images/Charles Briscoe-Knight

ভিক্টোরিয়া রাজ্যের জরুরী পরিষেবা সংস্থার (ভিক্টোরিয়া স্টেট ইমারজেন্সি সার্ভিস- VICSES) ডেপুটি চিফ অফিসার ডেভিড বেকার বলেন, আপনার বাড়ী যদি নিমজ্জিত হওয়ার শংকা থাকে, তাহলে আগে থেকেই বাড়ির মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী উঁচুতে তুলে রাখতে পারেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারোরই আসলে বন্যাপ্রবন এলাকায় থাকা উচিৎ নয়।

প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, পানি, খাদ্য এবং বহনযোগ্য চার্জার সহ আপদকালীন সময়ের জন্য ‘ইমারজেন্সি প্যাক’ তৈরি রাখুন।

কীভাবে দূর্যোগকালীন সময়ের জন্য প্রস্তুতি নেবেন তার বিস্তারিত বিবরণ SES ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

মিস্টার বেকার পয়ঃনিষ্কাশন লাইন এবং ড্রেন সময় থাকতে নিরোধ করা বা ব্লক করার পরামর্শ দিয়েছেন। আবর্জনার ফেলার ব্যাগে বালু ভরে পায়খানা ও পয়ঃপ্রণালীর মুখ বন্ধ করে দিলে সেখান থেকে বন্যার পানিতে আর আবর্জনা ছড়াবে না।   

জরুরী ভিত্তিতে বাড়ি খালি করার জন্য, বা জান-মাল বাঁচাতে দ্রুত সব ছেড়ে যাওয়ার রাস্তা সময় থাকতে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। প্রস্থানের মূল পথ আর যদি সেটা বন্ধ হয়ে যায় তবে তার বিকল্প পথ আগে থেকে ভেবে রাখতে হবে, যাতে আপনি কোন সমস্যা ছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছতে পারেন ।  

বন্যা দেখা দিলে যত শীঘ্র সম্ভব বাড়ি ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া আবশ্যক।Driving through deep waterGetty Images/Tobias Titz

ভারী বর্ষণে রাস্তায় দ্রুত পানি জমে যেতে পারে বা ‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড’ হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় ত্বরিত গতিতে পানি প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যাকে ফ্ল্যাশ ফ্লাড বলা হয়।

এরকম ফ্ল্যাশ ফ্লাডের জন্য প্রস্তুত থাকা আবশ্যক। রাস্তায় কখনো ভারী বর্ষণের সম্মুখীন হলে গাড়ি চালাবেন না। ফ্ল্যাশ ফ্লাড, বজ্রপাত এবং ঝড়ো বাতাস থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন; সম্ভব হলে উঁচু জায়গাতে অবস্থান নিন।

কলমের দৈর্ঘ্যের সমান অর্থাৎ, ১৫ সেন্টিমিটার গভীর পানিতেই কিছু কিছু গাড়ি ভেসে যায়। তাই বন্যার জলস্রোতকে কিছুতেই হেলাফেলা করা যাবে না।

যদি গাড়ির ভেতর আটকে যান বা গাড়ি থেকে বেরোতে না পারেন সেক্ষেত্রে শূন্য শূন্য শূন্য নাম্বারে(ট্রিপল জিরো) কল করুন।

কোন অবস্থাতেই বন্যার পানিতে হাঁটাচলা করা যাবেনা— বলেছেন স্টেসি পিজন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার লাইফ সেভিং সোসাইটির রিসার্চ ম্যানেজার।https://www.youtube.com/embed/gKDPgp5Ds9s

বাড়ন্ত বন্যার পানিতে কোথাও আটকে পড়লে সেটা জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। একদিকে বন্যার পানি বাড়ছে, অন্যদিকে আপনি বাইরে বের হতে পারছেন না— এমন অবস্থায় পড়লে ওই ভবনের সবচেয়ে নিরাপদ এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নিন আর ট্রিপল জিরোতে (০০০) কল করুন।  

বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে বসতবাড়ি জনবিচ্ছিন্ন হতে পারে, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ নাগরিক সুবিধার বিঘ্ন ঘটতে পারে। 

বাড়িতে আটকে পড়া অবস্থায় যদি বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ঠিকঠাক মত পেয়ে যান, তাহলে সময় থাকতে দ্রুত কন্টেইনারে ভরে তার পর্যাপ্ত মজুদ করতে হবে। 

বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে — এই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। 

যদি বন্যায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, আর রাস্তায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ন হয়  তখন ঘরেই আশ্রয় নেওয়া উচিৎ আর উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ। 

যদি বন্যার পানিতে পড়ে যান, তখন স্রোতের অনুকূলে ভেসে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে চিৎ হয়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করতে হবে, মাথা পানির উপর রাখুন আর হাত উপরে রেখে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন তা ইঙ্গিত করুন। 

পানিতে ভাসে এমন কিছুকে আঁকড়ে ধরুন যেমন এস্কি (বহনযোগ্য বরফের বাক্স বা কুলার), বুগি বোর্ড (সার্ফিং বোর্ড)বা এমনকি বল। 

পানিতে নেমে কাউকে উদ্ধার করতে যাবেন না। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম ছাড়া অন্যকে  উদ্ধার করতে নেমে নিজে বন্যার তোড়ে ভেসে গেছেন এমন অসংখ্য নজির আছে। 

এমন পরিস্থিতিতে আপনি সর্বোচ্চ যা করতে পারেন তা হচ্ছে, পানিতে ভাসে এমন কিছু তার দিকে ছুঁড়ে দিতে পারেন যাতে ওই ব্যক্তি ভেসে থাকতে পারেন এবং ইমারজেন্সি সার্ভিসে খবর দিতে পারেন। 

মিস্টার বেকারের বলেন, “যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে, যে কোন সম্পদের মূল্য মানুষের জীবনের চাইতে বেশি হতে পারেনা।” Getty Images/Rafael Ben-AriGetty Images/Rafael Ben-Ari

  • বন্যা প্রস্তুতির জন্য স্থানীয় স্টেট ইমারজেন্সি সার্ভিসের ওয়েবসাইট দেখুন অথবা আরও জানতে রয়্যাল লাইফ সেভিং অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট ভিজিট করুন
  • বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সাহায্যের জন্য এস ই এস’র নাম্বারে কল করুন ১৩ ২৫ ০০।
  • আবহাওয়া পূর্বাভাস আর এ সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানতে ব্যুরো অফ মিটিওরোলজি-র ওয়েবসাইটটি দেখুন।
  • জীবন ঝুঁকিতে পড়লে দেরি না করে ট্রিপল জিরোতে (০০০)কল করুন।
  • ভাষা অনুবাদে সহায়তার জন্য কল করুন ন্যাশনাল ট্রান্সলেটিং এন্ড ইন্টারপ্রেটিং সার্ভিস ১৩ ১৪ ৫০ নাম্বারে এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা কেন্দ্রের কথা জানান। আরও জানতে এবং বিনামূল্যে অনুবাদ ও দোভাষীর সহায়তা পেতে ভিজিট করুন TIS National

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here