Home Covid19 ওমিক্রন বনাম ডেল্টা: কে জিতবে?

ওমিক্রন বনাম ডেল্টা: কে জিতবে?

166
0

মহামারিতে বিশ্বে এখনও দাপট দেখাচ্ছে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এরমধ্যেই আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা দিচ্ছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ভবিষ্যতে কোন ভ্যারিয়েন্ট দাপট দেখাবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্য থেকে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের ধারণা, দাপুটে হয়ে ওঠার এই লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারে ওমিক্রন।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের নেতৃত্বে একটি গবেষণা কাজের জন্য করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন ড. জ্যাকব লেমিয়াক্স। তিনি বলেন, ‘এখনও অল্প কয়েক দিন হয়েছে, কিন্তু ক্রমবর্ধমানভাবে যেসব তথ্য আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওমিক্রন সম্ভবত ডেল্টাকে পেছনে ফেলে দেবে, সব জায়গাতে না হলেও বহু জায়গায়।’

অন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন কার্যকরভাবে ছড়াবে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে সেটা যদি হয়ও তাহলে কত দ্রুত ওমিক্রন দাপুটে হয়ে উঠতে পারে সেটা জানাও জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ক্লিনিক্যাল ভাইরোলজির পরিচালক ম্যাথু বিনিকার বলেন, ‘বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে আমরা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বাড়ার ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। ওমিক্রন কি এটাকে পাল্টে দিতে যাচ্ছে? আমার মনে হয় এটা আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানতে পারবো।’

ওমিক্রন নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ভাইরাসটি মৃদু নাকি মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করে? ভ্যাকসিন কিংবা আগের সংক্রমণ থেকে পাওয়া সুরক্ষা কি এটি এড়াতে পারে? এমন নানা প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে আঙুল তাক করছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ভ্যারিয়েন্টটি প্রথম শনাক্ত হয়। সেখানে ওমিক্রনের মানুষকে সংক্রমিত করার গতি এবং দাপুটে হয়ে ওঠায় অনেক বিশেষজ্ঞই আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে নতুন সংক্রমণের ঢেউ শুরু হবে, যাতে রোগীদের ভিড় উপচে পড়বে হাসপাতালগুলোতে।

নভেম্বরের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দৈনিক সংক্রমণের মাত্রা ছিল দুইশ’র কাছাকাছি। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে শুরুর পর বর্তমানে দেশটিতে দৈনিক ১৬ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। গৌতেং প্রদেশে ৯০ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্য আটটি প্রদেশেও দ্রুত এটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং দাপুটে হয়ে উঠছে।

আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক উইলিয়াম হ্যানিকম বলেন, ‘ভাইরাসটি অস্বাভাবিক গতিতে ছড়াচ্ছে, খুব দ্রুত।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় বিগত তিনটি ঢেউ থেকে বর্তমানে চলা সংক্রমণের ঢেউ বেশি তীব্র। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এটি বেশি সংক্রমিত ভাইরাস হতে পারে।’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন যেমন আচরণ করছে অন্য দেশগুলোতেও তা একই হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ড. জ্যাকব লেমিয়াক্স মনে করেন, যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশে যথেষ্ট পরিমাণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে সেখানে এটি কেমন আচরণ করতে পারে তার কিছু ইঙ্গিত ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে ডেল্টাকে সরিয়ে দাপুটে হয়ে উঠছে ওমিক্রন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা বাকি বিশ্বে এর আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে বিপুল অনিশ্চয়তা রয়েছে।

আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক উইলিয়াম হ্যানিকম বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাথমিক তথ্য বলছে আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার হার অনেক বেশি। এর অর্থ এই ভ্যারিয়েন্টটি হয়তো সুরক্ষা এড়াতে সক্ষম।

এছাড়াও দেখা যাচ্ছে ভাইরাসটি তরুণদের বেশি সংক্রমিত করছে। বিশেষ করে যারা টিকা পায়নি তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে মার্কিন বিজ্ঞানী ম্যাথু বিনিকার মনে করেন, বিশ্বের অন্যান্য অংশে এটার প্রভাব ভিন্ন হতে পারে বা ভিন্ন বয়স গ্রুপের মানুষেরা আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, বয়স্ক মানুষ বা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগা মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে শুরু করলে এই ভ্যারিয়েন্ট কেমন আচরণ করবে তা দেখা আগ্রহ উদ্দীপক হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here