Home Bangladesh বিজয়ের ৫০ বছর: পেছনে ফিরে দেখি

বিজয়ের ৫০ বছর: পেছনে ফিরে দেখি

127
0

গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর দশটি বছরও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু পরাশক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা শক্তির গভীর চক্রান্ত সেই স্বপ্ন নস্যাৎ করে দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

সময় নামের নদী বয়ে যায় নিরন্তর। মহাকালের সাগর, মহাসাগরে হারিয়ে যায়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া নদী যেমন রেখে যায় তার দুই তীরে বসতি উজাড় করা ভাঙনের নির্মম দুঃখবহ স্মৃতি, তেমনই রেখে যায় সোনালি ফসলের আশাজাগানিয়া উর্বর পলিও। একইভাবে সময়ও রেখে যায় তার কিছু অবিস্মরণীয় স্মৃতি, কালজয়ী কিছু ঘটনাপ্রবাহ, যাকে আমরা বলি ইতিহাস। সেই ফেলে আসা সময়ের অনেক কিছু হারিয়ে যায়, হারিয়ে গেছে বটে আমাদের জীবন থেকে, কিন্তু জ্বলন্ত সূর্যের দীপ্তি হয়ে রয়ে গেছে ১৯৭১।

হাজার বছর ধরে পরাধীন বাঙালি জাতির জীবনে এমন মহত্তম আশাজাগানিয়া উদ্বেল সময় আর কখনও আসেনি। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর শঙ্কা জেনেও এমন দুঃসাহসী আর ঐক্যে অটুট যোদ্ধার ভূমিকায়ও কখনও আর দেখা যায়নি বাঙালিকে।

সেই অবিস্মরণীয় একাত্তর থেকে আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১। মহান মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে এই ডিসেম্বরেই। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমরা যারা বেঁচে আছি নিঃসন্দেহে তারা বড় ভাগ্যবান। কত বীর মুক্তিযোদ্ধা ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে মুক্ত জন্মভূমিতে স্বাধীনতা অর্জনের আনন্দে উল্লসিত হয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে সমৃদ্ধির আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশ তারা দেখলেন না, শামিল হতে পারলেন না এমন ঐতিহাসিক গৌরবময় আনন্দ উদযাপনে।

কী বিস্ময়করভাবেই না বদলে গেছে বাংলাদেশ! অনুন্নত, দারিদ্র্যপীড়িত, অনাহারক্লিষ্ট, একটা ভূখণ্ড কীভাবে সচ্ছল, সমৃদ্ধশালী, তথা উন্নয়নের আলোয় আলোকিত, প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগের আধুনিকতম সমাজে রূপান্তরিত হতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত আজকের বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজকের বাংলাদেশ পর্যন্ত আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা, আবারও বলি সত্যিই তারা ভাগ্যবান।

মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে গিয়ে আমাদের মনে পড়বে ১৯৭১ সালের লাখ লাখ মানুষের আত্মাহুতি, স্বাধীনতার বেদিমূলে তারা তাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছিলেন আমাদের ভবিষ্যৎ রচনার জন্য। ত্রিশ লাখ শহীদ আর কয়েক লাখ মা-বোন তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন এই স্বাধীনতার জন্য।

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো আজ প্রবীণদের স্মৃতির জানালা খুলে দেবে, পেছন ফিরে তাকালে কোটি কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার ছবি ভেসে উঠবে। প্রিয় মাতৃভূমি মৃত্যুগুহা হিসেবে দেখতে বাধ্য হওয়া অগণিত মানুষের অশ্রু আর রক্তের মর্মস্পর্শী সেই ঘটনাপ্রবাহ স্মৃতিকে আপ্লুত করে দেবে নিশ্চয়ই।

এই ডিসেম্বরে নিঃসন্দেহে স্মৃতিতে ভেসে উঠবে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১৬ ডিসেম্বর শেষ বিকেলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই দৃশ্য, যা বাঙালির জন্য অনন্য গৌরবের স্মৃতি হয়ে আছে।

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে বিজয় থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পর্যন্ত অনন্য ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে ভেসে উঠছে আজ। মনে হয় যেন সেদিনের ঘটনা! অথচ ৫০ বছর অতিক্রান্ত!

ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িকতাদূষ্ট সামরিকশাসনে পিষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় বাংলার মানুষের নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ২৩ বছর যে কঠিন ত্যাগস্বীকার আর প্রাণপণ সাহসী সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের ঘটনাবলিও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ডিসেম্বরে আমাদের স্মৃতিতে ধ্রুবতারার মতো দেদীপ্যমান হয়ে জ্বলবে।

বলতে গেলে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলার মানুষের ভাষা- সংস্কৃতি আর অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক আঘাত আসার পর থেকে দিনে দিনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধিকারের সংগ্রাম এসে একাত্তরে উপনীত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। ১৯৬৬ সালেই বঙ্গবন্ধু চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার গন্তব্যে যাওয়ার। সেসব ইতিহাস আজ সর্বজনবিদিত।

বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছরে, সুবর্ণজয়ন্তী আর স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিক উদযাপনও সম্পন্ন হলো এই ডিসেম্বরেই। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের মহিমায় এবারের বিজয় দিবস অনন্য ঐশ্বর্যৈ ভাস্বর।

একাত্তরে বাংলাদেশে যে কঠিন মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, তার সোনালি ফসল আজ ঘরে তুলছে বাংলাদেশ। একদিন সাম্রাজ্যবাদীরা যে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিল, তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অপমানের অপচেষ্টা করেছিল, আজ তারাই বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখার জন্য স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশসমূহকে পরামর্শ দিচ্ছে। বাংলাদেশে আপন দক্ষতায় স্বনির্ভর উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় ভূষিত। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্বে গত একযুগে বদলে গেছে বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ এক দ্রুত উন্নয়নশীল বিকাশমান অর্থনীতির রাষ্ট্র।

সংগত কারণেই আজ ৫০ বছর পেরিয়ে এসে আমাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির দিকেও দৃষ্টিপাত করা দরকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এই বাংলাদেশে যদি সর্বক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ে উঠতে না পারে, তাহলে সব আনন্দই ম্লান হয়ে যাবে। অর্জনের আনন্দ আমাদের গর্বিত করছে, কিন্তু আগামী দিনগুলোতে যদি উন্নয়নের এই প্রবাহ বেগবান রাখা না যায়, তাহলে তা হবে লাখো শহীদের মৌন দীর্ঘশ্বাস আর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হতাশার; যা দেশকে ভালোবাসেন- এমন কোনো মানুষের কাম্য হতে পারে না।

মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে আজ বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তা কম গৌরবের নয়। কিন্তু এই গৌরবের পাশেই ইতিহাসের কিছু কলঙ্কও রয়ে গেছে। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন, যখন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় সন্তোষজনক পর্যায়ে উত্তীর্ণ, যখন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সদস্যপদ অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছে, তখনই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ভয়ংকর ধাক্কা সামলানো বাংলাদেশের জন্য এক অসম্ভব ব্যাপার ছিল বৈকি।

জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু বাংলাদেশকে অভিভাবকশূন্যই করা হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের প্রগতিশীল চেতনার যে রাষ্ট্রদর্শন, সেই শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নকেও হত্যা করা হয়েছে। যে কারণে একাত্তরের ঐক্যবদ্ধ জাতির বিভক্তি ঘটিয়ে আবার সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় রাজনীতির উত্থান ঘটেছে, যার বিষফল আজও বাংলাদেশকে ভোগ করতে হচ্ছে।

পাকিস্তানি দর্শনে উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধতা পেয়েছে রাষ্ট্রীয় সমর্থন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত স্রোতেই প্রবাহিত হয়েছে। অধিকাংশ সময় কেটেছে সামরিক শাসনে। কখনও সামরিক পোশাকে, কখনও সিভিল পোশাকে । ফলে ব্যক্তিবিশেষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটলেও জনসাধারণের জীবনমান উন্নত হয়নি। দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তাও করা হয়নি। দুস্থ-দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য অনিবার্য কর্মসূচি। কিন্তু সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যও বাংলাদেশকে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।

এই একটি ঘটনা থেকেই অনুধাবন করা যায় প্রগতিশীল আধুনিক দর্শন থাকলে দেশের জনসাধারণের কল্যাণ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়।

গত একযুগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির দিক থেকে যে অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছেও বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হতেন, যদি আর দশটি বছরও বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর একটি হিসেবে গৌরবের আসন নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু পরাশক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা শক্তির গভীর চক্রান্ত সেই স্বপ্ন নস্যাৎ করে দিয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

বিলম্বে হলেও আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। কিন্তু আরও বহুদূর যেতে হবে সত্যিকারের সুখী-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর আজীবন স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে।

যে অর্থনৈতিক উন্নতি ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে তার সুফল আরও অধিক মাত্রায় জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছতে হবে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে সত্য কিন্তু তার সিংহভাগ কয়েক হাজার কোটিপতির ঘরে বৃত্তাবদ্ধ। দেশের সম্পদ কালো টাকার মালিকরা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। বিদেশে ‘বেগমপাড়া’র মতো অবাঞ্ছিত ধনীপাড়া গড়ে উঠেছে, যা কাম্য হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, আজ ৫০ বছর পরেও সেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে তার কন্যা শেখ হাসিনাকে।

জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় বলেছিলেন-

“আজকে আমার একটিমাত্র অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে— আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলবো বাংলার জনগণকে— এক নম্বর কাজ দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে।… আমি গ্রামে গ্রামে নামবো। এমন আন্দোলন করতে হবে যে, যে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, মুনাফাখোর যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান করে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।”…

ঘরে ঘরে বঙ্গবন্ধু যে সংকট মোকাবিলা করতে হিমশিম খেয়েছেন সেই সংকট ৫০ বছর পরও বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে আছে! বঙ্গবন্ধু ওই ভাষণে করণীয় প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন এক নম্বর হলো, দুর্নীতিবাজকে খতম করা। দুই নম্বর হলো, কলকারখানায় ক্ষেত-খামারে প্রোডাকশন বাড়ানো। তিন নম্বর হলো, পপুলেশন প্ল্যানিং। চার নম্বর হলো, জাতীয় ঐক্য।

আজও বাংলাদেশের জনসাধারণের ভাগ্য-উন্নয়নের জন্য এই চারটি কর্মই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় জীবনে অনেক বড় সমস্যার সমাধান সম্ভব জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর পেছন ফিরে তাকালে অনেক অর্জন আমাদের আশান্বিত করে কিন্তু তৃপ্ত হবার সুযোগ নেই। এখনও জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি হীন ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় সংকীর্ণতায়। আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে বড় বাধা আমরা ৫০ বছর পরেও সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি, চিকিৎসার সুযোগ বেড়েছে, প্রাইভেট হাসপাতাল বেড়েছে। কিন্তু সর্বস্তরে গরিব মানুষের চিকিৎসার সুযোগ নেই।

কমিউনিটি ক্লিনিক সব রোগের চিকিৎসা দিতে পারে না। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো দুর্নীতিমুক্তও নয়। চিকিৎসকদের অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে অধিক আগ্রহী। এ সংকট নিরসনের উপায় উদ্ভাবন করতেই হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রসার ঘটেছে সন্দেহ নেই কিন্তু শিক্ষার লক্ষ্য এখন বাণিজ্য। শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ সফল হচ্ছে না শুধু দুর্নীতির কারণে। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকার কারণে প্রযুক্তি যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

আজকের তরুণ প্রজন্মের ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে দেশকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন স্ব-কর্মসংস্থান করে। তবে এ সত্য আমরা যেন ভুলে না যাই- অর্থ-সম্পদে ধনী হলেই কোনো জাতি সমৃদ্ধশালী হয় না। সেজন্য চাই শিক্ষা-সংস্কৃতিরও ব্যাপক প্রসার, যাতে উন্নত মানবিক গুণসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি হয়।

আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভোগবাদী মূল্যবোধ থেকে বের করে আনতেই হবে। মানবিক মূল্যবোধের অনুকূল পাঠ্যপুস্তকও রচনা করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানুষের মত মানুষ হিসেবে ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত এই মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আজ প্রতিজ্ঞা হোক যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা সবকর্মে সততার পরিচয় দেব। তা না হলে ৩০ লাখ শহীদের আত্মা আমাদের অভিশাপ দেবে, এই নির্মম সত্য আমরা যেন ভুলে না যাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here