বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল জেনেশুনে নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসায়িক বিক্রি বাড়াতে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত চাহিদা তৈরি হয় এ ধরনের পণ্যকে বেছে নেয় ইভ্যালি। যেমন- মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোটরবাইক, গাড়ী, গৃহস্থলীপণ্য, প্রসাধনী, প্যাকেজ ট্যুর, হোটেল বুকিং, জুয়েলারি, স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রী, ফার্নিচার ইত্যাদি। এসব পণ্যের মূল্য ছাড়ের ফলে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের বিশাল আকারে দায় তৈরি হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গ্রেফতার রাসেল ও তার স্ত্রীর ব্যবসায়িক অপকৌশল ছিল নতুন গ্রাহকের উপর দায় চাপিয়ে দিয়ে পুরাতন গ্রাহক ও সরবরাহকারীর দায়ের (লায়াবেলিটিস) অল্প অল্প করে পরিশোধ করা। অর্থাৎ ‘সায় ট্রান্সফার’ এর মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিল ইভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির নেওয়ার্কে যত গ্রাহক তৈরি হত, দায় তত বাড়ত। গ্রেফতার রাসেল জেনেশুনে এ নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
এদিকে, ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক ৫ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন বলে জানিয়েছেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি (রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তিনি ও তার স্ত্রী পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক ৫ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন। তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি (রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার করেন। এছাড়া কোম্পানির প্রায় ২৫-৩০টি যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সাভারে রাসেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে।
তিনি বলেন, ইভ্যালির বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০-৩৫ কোটি গ্রাহকের টাকা আটক হয়ে আছে বলে রাসেল জানান।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাসেল ২০০৭ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি শুরু করেন। প্রায় ৬ বছর চাকরির পর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি প্রায় এক বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করেন এবং পরে তিনি ওই ব্যবসা বিক্রি করে দেন। ২০১৮ সালে আগের ব্যবসালব্ধ অর্থ দিয়ে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু হয়। কোম্পানিতে তিনি সিইও এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও বলেন, ইভ্যালির অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভাড়াকৃত স্পেসে ধানমন্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে ভাড়াকৃত স্পেসে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যার হাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী ছিল। যা ব্যাবসার অবনতিতে বর্তমানে স্টাফ ১৩০০ এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে।
কর্মচারীদের একসময় মোট মাসিক বেতন বাবদ দেয়া হতো প্রায় ৫ কোটি টাকা যা বর্তমানে দেড় কোটিতে দাঁড়িয়েছে। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টায় মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব সদরদফতরে নেওয়া হয়। ওই মামলায় রাসেল দম্পতিকে গ্রেফতার দেখায় র্যাব।