গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পরীমণি হাতের তালুতে লেখা ছিল ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’। হাস্যোজ্জ্বল এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রথম যে প্রশ্ন জনমনে এসেছে তা হলো- ‘এই কড়া বার্তা কার উদ্দেশে?’ বার্তা যার বা যাদের উদ্দেশে- তা পরে পরীমণি নিজেই জানিয়েছেন। আসলে তার আশপাশে যারা তাকে ভালবাসার অভিনয় করেছেন, তাদের উদ্দেশেই কারাগারে বসেই এই বার্তা লিখেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর রীতিমতো ‘বিপ্লব’ ঘটে গেছে। পরীমণির হাতের বার্তা যেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রূপ পেয়েছে।
যারা অনলাইনে বা অফলাইনে চিত্রনায়িকাকে মুক্ত করার লড়াইয়ে ছিলেন, তারা একই বার্তা হাতে লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বানাতে থাকেন নিজেদের প্রোফাইল পিকচার। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) সারাদিন ছড়িয়ে পড়তে থাকে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লেখা হাত, তৈরি হয় নানা আর্টওয়ার্ক, এমনকি ‘মিম’ও। উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি এই বার্তা লিখে একটি কেকও বানিয়েছেন। বন্ধুরা একসাথে হয়ে মিষ্টিমুখের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘সাহসের নাম পরীমণি। তোমার টানটান শিরদাঁড়া আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। তাই একটু মিষ্টিমুখ।’
নাদিজা সুলতানা আর্নিক আর্টওয়ার্ক শেয়ার করেছেন। পরীমণি কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সাদা ওড়না-পাগড়ি পরে হাতে যে ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’ লিখেছেন- গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেই ছবি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে আর্টওয়ার্ক। তিনি সেটা শেয়ার করে লিখেছেন, ‘নায়িকা হওয়ার যোগ্যতা যদি সবার থাকতো, তাহলেতো সবাই নায়িকা হয়ে যেতো। এখনকার দিনের ভাষায় বললে বলতে হবে, নায়িকারা তখনই নায়িকা হবে যখন সে ফুটেজ খাবে, ট্রেন্ড সেট করবে। নায়িকার জন্য সমগ্র জাতি অপেক্ষা করবে, এটাই স্বাভাবিক।’
মেহেদি দিয়ে হাতে একই বাক্য লিখে ছবি পোস্ট করছেন অনেকেই
তিনি আরও লিখেছেন, ‘একটা পুরুষশাসিত সমাজ আরও একবার প্রতিষ্ঠিত করলো- পুরুষের শক্তি কত বেশি। হোক তা অর্থের, হোক তা প্রাচুর্যের বা ক্ষমতার। কিন্তু মজার বিষয় হলো যে, যত ক্ষমতাই দেখাক না কেন, once নায়িকা always a নায়িকা (একবার যিনি নায়িকা, তিনি সবসময়ই নায়িকা)।
পরীমণির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর। অ্যক্টিভিস্ট আফসানা কিশোয়ার লোচন তার ছবিটি আপ করার সময় লিখেছেন, পরীমণির সাথে একাত্মতা প্রকাশ।
অ্যাক্টিভিস্ট শাশ্বতী বিপ্লব বলেছেন, তিনি একাত্মতা ও সংহতি জানাতে এই ছবি তুলেছেন। পরীমণির ছবিটা দেখে সকালে তিনি লেখেন, ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ- আহা! কি একখান বাণী! ভলোবাসা পরীমণি। তোমার গভীর প্রেমে পড়ে গেলামগো মেয়ে। তুমি দেখিয়ে দিলে, কীভাবে জাহান্নামের আগুনে বসে পুস্পের হাসি হাসতে হয়। ইচ্ছা করছে দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তোমায়! বাংলার মেয়েরা দেখো, শেখো, কেমন করে শিরদাঁড়াটা সোজা করে বাঁচতে হয়।
শুরুতে যারা পরীমণির এ ছবি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হাতে এ বাণী লিখেছেন তাদের অনেকের মতে, যারা ছবি তুলেছে তাদের প্রত্যেকের নিজেদের বোঝাপড়া আছে। সবাই মিলে প্ল্যান করে কিছু করা হয়েছে এমন না। তবে তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন খোদ পরীমণি।