তিন দফা রিমান্ড শেষেও জামিন মেলেনি চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণির। বনানীর বাসা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে হালের এই নায়িকাকে। তবে এ সংশ্লিষ্ট মাদকের মামলায় অন্যান্য আসামিরা সহসায় জামিনপ্রাপ্ত হলেও পরীমণির ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যতিক্রম। তার জামিন বিষয়ে ‘তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত’ এবং সেসব তথ্য-উপাত্তের ‘যাচাই-বাছাই’ বাধা বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
বেশ কয়েকবার জামিন চেয়ে ব্যর্থ পরীমণির আইনজীবীরা হাঁটতে চান নতুন কৌশলে। যার কারণে শনিবার (২১ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে পরীমণির পক্ষে তারা সরাসরি জামিন আবেদন দাখিল করেননি। এ মুহূর্তে তারা পরীমণির সঙ্গে আলোচনা করে নতুন আইনি পদক্ষেপে যেতে চান বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
এদিকে বেশকিছু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ আছেন পরীমণি। পাশাপাশি তিনি একজন নারী, চিত্রনায়িকা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই মাদক উদ্ধারের মামলায় তার জামিন পেতে কোনও আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ফখরুল বাহার শাকী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, পরীমণিকে তিন দফায় রিমান্ডের আইনি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংবিধানিক যৌক্তিকতা একটি বিতর্কিত বিষয়।
তিনি বলেন, আমাদের আইনি সংস্কৃতিতে এক অদ্ভুত জিনিসের নাম ‘রিমান্ড’। সংবিধানে নেই, ফৌজদারি আইনে নেই কিন্তু বিচার-আচারে এর যথেচ্ছ প্রয়োগ উদ্বেগের। অথচ উচ্চ-আদালত নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কখন একজন অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়া যাবে। পরীমণিকে জামিন দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইনজীবী ফখরুল বাহার শাকী বলেন, তার (পরীমণি) থেকে যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে তাতে করে এতদিনের রিমান্ডের দরকার হয় না। এর থেকেও বেশি মাদক উদ্ধারের মামলায় আসামিরা অনায়াসে জামিন পেয়েছেন। অথচ পরীমণির বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকের তুলনায় তাকে অযৌক্তিকভাবে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবার তদন্ত কর্মকর্তারা রিমান্ডে কী কী তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে, তাও কিছু বলেনি। ফলে কার্যকর কিছু হচ্ছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। আমরা মনে করি পরীমণি একটি চক্রান্তের শিকার। তিনি স্বাভাবিকভাবে জামিন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই, জামিন তার অধিকার।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুসারে, পরীমণির বাসা থেকে সর্বমোট ১৯টি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৭টি বোতলে ১ লিটার করে ১৭ লিটার এবং ২টি বোতলে ৭৫০ মিলি লিটার করে দেড় লিটারসহ মোট সাড়ে ১৮ লিটার বিদেশি মদ পাওয়া গেছে; যা একটি কাঠের ফ্রেমে রক্ষিত ছিল। এছাড়াও একটি সাদা জিপারে ৪ গ্রাম আইস বা ক্রিস্টালমেথ এবং এক ব্লট এলএসডি পাওয়া যায়। এসবের সঙ্গে মাদক সেবনের জন্য একটি বং পাইপ উদ্ধার করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরীমণির কাছ থেকে বেশকিছু মাদক উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৮ লিটার বিদেশি মদ ছিল। এছাড়াও এলএসডি ও আইস-এর মতো ভয়ঙ্কর মাদকও তার থেকে পাওয়া গেছে। সেসব মাদকের পরিমাণ একেবারেই কম নয়! তাই এসব মামলায় সহসা জামিন হয় না। এমন অনেক মামলার আসামি এখনো কাস্টডিতে আছে।
এছাড়াও মামলাটি তদন্তাধীন। প্রাথমিক তদন্তে অনেক তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে, যা যাচাই-বাছাই করাও প্রয়োজন। তাই তদন্তের কারণে হলেও এ মূহূর্তে পরীমণির জামিনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আবু।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা আমরা সবাই জানি যে, বিদেশি মদ কোত্থেকে আসে। এটুকু জানতে এতদিন ধরে একজন নারীকে বারবার রিমোন্ডে নেওয়ার বিষয়টি মোটেও বোধগম্য নয়। আমরা এর আগেও এর চেয়ে আরও ভয়াবহ মাদক কারবারীদের বিভিন্ন মামলায় জামিন নিতে দেখেছি। তাছাড়া নারীদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনত বিশেষ বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি, তার আইনজীবীরা সাথে কথা বলার অনুমতি চেয়েছিলো। কিন্তু তাতে বাধা দেওয়া হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার রয়েছে তার আইনজীবীর কথা বলার। তাকে অবশ্যই কথা বলতে দিতে হয়। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা তার অধিকার।