Home Bangladesh ঢাকায় বিএনপির নতুন কমিটি: ওপরে উষ্ণতা, ভেতরে আক্ষেপ

ঢাকায় বিএনপির নতুন কমিটি: ওপরে উষ্ণতা, ভেতরে আক্ষেপ

147
0

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে মনোনীত নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সোমবার (২ আগস্ট) বিকালে কমিটি ঘোষণা আসার পর দুই আহ্বায়ক ও দুই সদস্য সচিবের বাসায় নেতাকর্মীরা ভিড় করলেও দলের মধ্যে নানা আক্ষেপ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামকে কেন্দ্র করে এই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে অনেক বেশি। তবে কমিটি ঘোষণার পর সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল উষ্ণ পরিবেশ। নেতাকর্মীদের অবস্থান ও কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অবস্থানকে ঘিরে এ পরিস্থিতি দেখা যায় সরেজমিনে।

সালামের বাসায় ভিড়, মজনু গেলেন নয়া পল্টনে

সরেজমিনে সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে রাজধানীর নয়া পল্টনে দেখা যায়, কমিটির ঘোষণা আসার পরই বিএনপির কেন্দ্রীয় কাযালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ ও গোয়েন্দাবাহিনীর সদস্যরা। পথচারী ও ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়া অনেককেই পড়তে হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে।

রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। গাড়ি থেকে নেমেই নেতাকমীদের উদ্দেশে তার মন্তব্য, ‘কেউ বাইরে থাকবেন না। সবাই অফিসে চলে আসেন।’ এর আগে রাত পৌনে ৮টার দিকে রফিকুল আলম মজনু শান্তিনগরে কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের বাসায় যান। সেখানে তারা সালামের বাসভবনের পঞ্চম তলায় একান্তে কিছু সময় কথা বলেন।

বিএনপি মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু
ওই সময় আবদুস সালামের বাসায় অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী ও মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকার বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। কেউ কেউ ফুলের তোড়া, কেউ হাতে মিষ্টি নিয়ে নেতার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কোনও কোনও ব্যক্তিকে নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা নিজেদের পরিচয় ও এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতেই নারাজ দেখান।

নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিবকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, আমার ওপরে আস্থা রাখার জন্য। আমরা যত দ্রুত সম্ভব কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবো।’

আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সবগুলো কমিটি করে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মহানগর কমিটি করার চেষ্টা করবো। যেন সাংগঠনিকভাবে বিএনপিকে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়৷’

আব্দুস সালাম জানান, তার মূল টাগেট হচ্ছে— গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে আনা। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তরান্বিত করাই হচ্ছে আমাদের মূল টার্গেট। এরমধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো। সবচেয়ে বড় কথা, করোনা মোকাবিলায় যারা ব্যর্থ হয়েছে, তারা দেশের মানুষের প্রতি কোনও কমিটমেন্ট দেখাতে পারেনি।’

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু
রফিকুল আলম মজনু তার অনুসারীদের নিয়ে কার্যালয়ের হল কক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখানে শতাধিক নেতাকর্মী স্লোগান দেন। এসময় তিনি তার নতুন পদায়নের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানান। বক্তব্যে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি দেন কর্মীদের। সেখানে তিনি যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান।

মহানগর দক্ষিণের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কমিটি ঘোষণার পর তারেক রহমানের সঙ্গে কমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও সদস্য সচিব রফিকুল আলমের কথা হয়েছে। সেখান থেকে মজনুকে কার্যালয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সতর্ক পাহারা

ওপরে উষ্ণতা, ভেতরে আক্ষেপ

আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ৪৯ জনের কমিটি করা হয়। সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বর্তমানে যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। মির্জা আব্বাসের অনুসারী হিসেবেই তাকে কমিটিতে সামনে রাখা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

তবে এই কমিটিতে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ‘সভাপতি হাবিবুন নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার’ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্যকে বাদ দেওয়ার কারণে ‘নেপথ্যে রহস্য’ খুঁজে পাচ্ছেন না নেতারা। 

প্রায় সমর্ধমী রহস্য সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই অধিনায়ক দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও তাকে মহানগর কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করার নেপথ্য কারণ নিয়ে দলের মধ্যে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারাগারে থাকা একজনের তত্ত্বাবধানে আমিনুল ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। আর এ কারণেই দলের নেতাকর্মীরা বিষয়টি টের পেলেও মুখে এঁটেছেন কুলুপ।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানকে কয়েকবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, উত্তর কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম রাত ১০টার দিকে আমান উল্লাহ’র বাসায় যাচ্ছেন। সেখানে তারা আলোচনা করে ঠিক করবেন পরবর্তী করণীয়।

আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও মহানগর অফিস ছিল তালাবদ্ধ

মহানগর অফিস বন্ধ

বিএনপির ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও মহানগরের মূল কার্যালয় ছিল অনেকটাই পরিত্যক্ত। সোমবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেছে, নয়া পল্টনের ভাসানী ভবনটি তালাবদ্ধ। ভবনের নিচে একটি ক্ষুদ্র চা দোকান থাকলেও জনসমাগম প্রায় ছিলোই না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here