করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতি এবং মৃত্যুহার বাড়ার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে খুলনার জনসাধারণের মধ্যে উদাসিনতা দেখা যাচ্ছে। কঠোর লকডাউনেও লোকজন স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানছেন না। খুলনার করোনা হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই রোগী ও স্বজনদের চলাচলের অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফ্লোরে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সামনে মাস্ক থুতনিতে রেখে কথা বলছেন একজন দর্শনার্থী। আবার রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনরা অবাধে হাসপাতালে বাইরে ও ভেতরে চলাচল করছেন। কিন্তু দায়িত্বশীলরা এসব বিষয়ে তেমন তদারকি করছেন না। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
এছাড়া এ হাসপাতালে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইনে সাধারণ মানুষ নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন। গায়ে গা মিশিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।
সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে করোনা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, গত বছরে এত অল্প সময়ে রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হতে দেখেননি তারা। বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল অধিকাংশ রোগীকে। কিন্তু এ বছর শুধু হাসপাতালের চিকিৎসায় চলছে না, প্রয়োজন পড়ছে আইসিইউর। রোগীর চাপ থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হচ্ছেন রোগীকে ফিরিয়ে দিতে। সংক্রমণের হার বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতেও কেনাকাটা সব জায়গায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক দেখা যায় না কারও মুখে।
করোনা বিষয়ে নাগরিকদের অসেচতনতা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে জানিয়ে খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর অনেকেই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাদ দিয়েছেন। বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমরা দেখছি, পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমাদের অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। ঘরে বা বদ্ধ রুমে যখন আমরা মিলিত হচ্ছি, তখন ফ্যান বা এসি চালু করতে হচ্ছে। ঘরের বাতাস যেহেতু ঘরের মধ্যেই চলাচল করছে, তাই সংক্রমণের মাত্রাও বাড়ছে।’
খুলনা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রশাসন ও নাগরিকদের সমন্বিত সচেতনতা ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। পাড়া মহল্লার আনাচে কানাচে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানাই সংক্রমণ বৃদ্ধির বড় কারণ। এর ফলে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া দেরি করে পরীক্ষা করা এবং হাসপাতাল বা বাসা-বাড়িতে করোনা রোগীর সঙ্গে দেখা করা ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়ছে।’
ডা. রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, ‘যেসব রোগীর ডায়বেটিস, হার্টের সমস্যা রয়েছে; লিভারের রোগে আক্রান্ত ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত; অ্যাজমা, হাইপারটেনশন, প্রেশার রয়েছে তারা করোনা আক্রান্ত হলেই অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। চিকিৎসকেরা চেষ্টা চালিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারছেন না। এছাড়া দেখা গেছে বেশি মারা যাচ্ছেন বয়স্ক রোগীরা।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই হাসপাতালে আসছেন শেষ মুহূর্তে। ততক্ষণে তাদের শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগ রোগীর অক্সিজেন লেভেল নেমে যাচ্ছে ৮০-এর নিচে। এ সমস্ত রোগীই মৃত্যুর তালিকা বাড়াচ্ছেন।’
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে ১০ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৯৫৯ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক হাজার ৫৩৩ জন।