Home International যে কারণে ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি এত খারাপ

যে কারণে ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি এত খারাপ

143
0

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সর্বাধিক মৃত্যু হওয়া দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই ব্রাজিলের অবস্থান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষের। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহেও দেশটি সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছাবে না।

করোনার দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়ায় এমন ধরন প্রথম ব্রাজিলে শনাক্ত হয়। যা বিশ্বে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বড় কারণ।

প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ক্রমাগত ভাইরাসের ভয়াবহতাকে খাটো করে তুলে ধরে আসছিলেন। কিন্তু এখন সেই তিনিই দেশজুড়ে ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে মনোনিবেশ করছেন। যদিও তার সমালোচকরা বলছেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে।

করোনা নিয়ে যা যা বলেছেন বলসোনারো?

মহামারি মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বড় ধরনের সংশয়ের কথা জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট:

  • করোনাকে তিনি লিটল ফ্লু বলে আখ্যায়িত করেছেন
  • গরিবরা আরও গরিব হবে দাবি করে দেশজুড়ে লকডাউন জারির বিরোধিতা করেছেন
  • লকডাউন জারি করা রাজ্য গভর্নর ও মেয়রদের ‘অত্যাচারী’ ডেকেছেন
  • ভ্যাকসিন নেবেন না জানিয়ে এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন
  • ফাইজারের ভ্যাকসিনে মানুষ কুমিরে পরিণত হতে পারে কৌতুক করেছেন
  • লাখো ডোজ ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন
  • জনগণকে বলেছেন পরিস্থিতি নিয়ে ঘেনঘেনানি বন্ধ করতে

বলসোনারো লকডাউনের বিরোধিতা করেই যাচ্ছেন। যদিও তার সরকার দেশটির ২০ কোটির বেশি জনগণের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশ্বের প্রতি চার মৃত্যুর একটি ব্রাজিলে

করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত লাতিন আমেরিকায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত প্রতি চারজনের একজন ব্রাজিলের।

জনসংখ্যার অনুপাতে মৃত্যুর হিসাবে পেরু ও মেক্সিকোর পরেই আছে ব্রাজিল। কিন্তু দেশটিতে দৈনিক মৃত্যু দ্রুতগতিতে বাড়ছে। মহামারির সময়ে যে কোনও মাসের তুলনায় দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে মার্চ মাসে। সংক্রামক নতুন নতুন ধরণে আক্রান্ত হওয়ার ফলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলমান রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একটি পুর্ভাবাসে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে ব্রাজিলে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আঞ্চলিক নেতারা বলছেন, ভয়াবহতা নিয়ে মিশ্র বার্তা ও লকডাউন প্রতিরোধের কারণে জাতীয়ভিত্তিতে বিধিনিষেধ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন কঠিন করে তুলেছে।

হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারের বেড পূর্ণ হয়ে গেছে বা সামর্থ্যের একেবারের কাছাকাছি।

ডিউক ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্সের এক ব্রাজিলীয় অধ্যাপক ড. মিগুয়েল নিকোলেলিস বলেন, ব্রাজিলের হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ব্যাপক পরিমাণে ভ্যাকসিন পাই তাহলে কেবল পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত করতে পারব।

ভ্যাকসিন স্বল্পতা

লাতিন আমেরিকার অনেক দেশের তুলনায় ভ্যাকসিন কর্মসূচি পরিচালনায় ব্রাজিলের ভালো রেকর্ড রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবকাঠামো বেশ শক্তিশালী। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন উদ্যোগ চিলি ও উরুগুয়ের পেছনে পড়ে গেছে। অথচ ভ্যাকসিনের প্রতি ব্রাজিলীয়দের আস্থা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি। কিন্তু সরবরাহ মন্থর।

ব্রাজিলীয় মাইক্রোবায়োলজিস্ট নাটালিয়া পাস্টারনাক বলেন, আমাদের অনেক ভালো ভ্যাকসিন কর্মসূচি ছিল, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা। যদি পর্যাপ্ত ডোজ থাকত তাহলে কী করতে হবে তা আমাদের জানা আছে। আমাদের বিশেষজ্ঞ ও অবকাঠামো রয়েছে। শুধু প্রয়োজন ভ্যাকসিন।

মার্চের শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ মিলিয়নের অর্ধেক ভ্যাকসিন ডোজ পাওয়া গেছে।

এখন ব্রাজিল দেশটির সব জনগণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ডোজের অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, অনেক দেরিতে এই চুক্তি হলো। কারণ অনেক বড় দেশ, যাদের ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য রয়েছে তারা এগিয়ে গেছে।

আগস্টে ব্রাজিল সরকার ফাইজারের ৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। সম্প্রতি দেশটি ফাইজারের ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু বছরের দ্বিতীয়ার্ধের আগে তা ব্রাজিলে পৌঁছাবে না।

অতীতে বলসোনারো সমালোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল সরকার চীনা কোম্পানি সিনোভ্যাকের কাছ থেকে ১০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার অর্ডার দিয়েছে। নভেম্বরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, দেশে চীনা ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা স্থগিত করা ছিল তার জন্য আরেকটি জয়।

ব্রাজিলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন উৎপাদিত হচ্ছে। সরকার জানিয়েছে, কয়েক লাখ ভ্যাকসিন তারা উৎপাদন করবে। কিন্তু উপাদানের অভাবের কারণে ব্রাজিলের কারখানায় উৎপাদন সীমিত আছে।

করোনার ব্রাজিলীয় ধরনের ঝুঁকি

ব্রাজিলের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ফিওক্রজ জানিয়েছে, দেশটিতে করোনাভাইরাসের ৯২টি ধরণ শনাক্ত হয়েছে। বিশেষ করে পি.১ ধরনটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এটি মূল করোনার চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক এবং লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বে অনেক দ্রুত ছড়াচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, করোনার ব্রাজিলীয় ধরনের বিরুদ্ধে এখনকার ভ্যাকসিনগুলো কার্যকর। কিন্তু তা হয়ত যথেষ্ট নাও হতে পারে। এছাড়া ভবিষ্যতে নতুন ধরন শনাক্ত হতে পারে।

ড. নিকোলেলিস বলেন, বিশ্বজুড়ে মহামারির একমাত্র এপিসেন্টার শুধু নয়, মহামারি ঠেকানোর পুরো আন্তর্জাতিক উদ্যোগকেও ভেস্তে দিতে পারে ব্রাজিল। প্রতি সপ্তাহে আমরা নতুন ধরন শনাক্ত করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here