বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ অভিহিত করে তাঁর অনুসৃত পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জিয়াউর রহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, একদলীয় বাকশালী অন্ধকার থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আদলের মধ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া-এগুলো ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। আমি মনে করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের সামনে সবসময় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো থাকবেন। সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে লক্ষ্য করেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমরা একটা অত্যন্ত বিরুপ প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে আছি। এই বিরুপ প্রতিকূল অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব দেখিয়েছেন এবং আমরা এখন দেখছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান তিনি আজকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা আমাদের সেই দিক নির্দেশ করে, যেই দিক নির্দেশের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে সক্ষম হব, আমরা আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হব এবং আমরা সত্যিকার অর্থেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, মানুষের বাংলাদেশ, আলোকিত বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে সক্ষম হব।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শুধু বলতে চাই, একটা কঠিন সময় আমরা পার করছি। একদিকে করোনাভাইরাসের আক্রমণ, অন্যদিকে একটা ফ্যাসিবাদী এক নায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমস্ত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত- এটাকে প্রতিরোধ করে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে আবার সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে, জনাব তারেক রহমান সাহেব আজকে যে স্বপ্ন দেখছেন তা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ তাকে সামনে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আসুন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন তখনই সফল হবে যদি আমরা তাঁর অনুসৃত পথে এগিয়ে যেতে পারি।’
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে দেশ বিনির্মাণে যে যে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে সেই সব ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান সফল। এর জন্য তারা জিয়াউর রহমান, তাঁর পরিবার এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিএনপিকে ভয় পায়।
সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, ‘সেজন্য আপনারা দেখছেন, আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা আজকে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আর ইতিহাসকে বিকৃত করছে। কেননা যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আজকের প্রজন্ম জানে, দেশের ৫০ বছরে ইতিহাস যদি জানে তাহলে আওয়ামী লীগের মুখ কোথাও থাকবে না।’
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা আজকে যে কথা বলতে পারছি তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান, আজকে আওয়ামী লীগ যে কথা বলতে পারছে, রাজনীতি করতে পারছে- সেটাও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান। অথচ তারা অকৃতজ্ঞের মতো অস্বীকার করে শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদান। তারা তাঁর মুক্তিযুদ্ধের পদক ছিনিয়ে নিতে চায়। মুক্তিযুদ্ধ যে শহীদ জিয়াউর রহমান করেছেন-এটা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেই পদক কীভাবে আপনারা ছিনিয়ে নেবেন, কিভাবে আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাসকে মানুষের কাছ থেকে ভুলিয়ে দেবেন?’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, ইতিহাসের নায়ক। সেই নায়ককে আপনারা সরাতে পারবেন না। একজন নায়কের অবস্থান সরাতে হলে আরেকজন নায়ক লাগবে। সেই নায়ক তো আপনাদের মাঝে নেই। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেটা তৈরি করেছেন, হাজারো নায়ক যদি আসে কোনো লাভ হবে না। তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আমাদের দৃশ্যের আড়ালে হলেও মনের আড়ালে নয়। আমি, আমরা, দেশ-বিদেশে গণতন্ত্রমনা মানুষ তাঁকে স্মরণ করে। তরুণরা স্লোগান দেয়, ‘জিয়া তোমায় মনে পড়ে’। যতদিন গণতন্ত্র অন্ধকারে থাকবে, ততদিন গণতন্ত্র আলোর মুখ দেখবে না, ততদিন এদেশের মানুষ জিয়াকে মনে করবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।