করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও। এরইমধ্যে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। অবাক করা বিষয় হলো, ৩৩ লাখ মানুষের এই জেলায় সরকারি-বেসরকারি কোনও হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেড নেই। গুরুতর রোগীদের তাই ছুটে যেতে হচ্ছে ঢাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা হলে জেলার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল। অর্থোপেডিক, গাইনি, শিশু, সার্জারিসহ ১৪টি বিভাগ চালু থাকলেও এখানে নেই আইসিইউ। গুরুতর রোগীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না অনেক সময়। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক রোগীর স্বজন ও এলাকার বাসিন্দারা।
জেলার নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘এবারের করোনায় রোগীদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। তারা হিমশিম খাচ্ছে। পরিবারগুলো কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। এ অবস্থায় এখানে কয়েকটি আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা খুব দরকার। তাতে অন্তত কয়েকজনকে হলেও জীবনের আশা দেখানো যাবে। সেটা না হলে এখানে মানবিক সংকট দেখা দেবে।’
কবির আহম্মেদ নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমাদের পক্ষে ঢাকায় যাওয়া সম্ভব নয়। ঢাকায় গেলেও তো আইসিইউ পাবো না। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন, যেন দ্রুত এখানে আইসিইউ স্থাপন করা হয়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রানা নূরুস শামস জানান, ‘করোনারোগীদের জন্যে ন্যাজাল ক্যানুলাই এখানে শেষ ভরসা। আইসিইউ বেড না থাকার কারণে আমরা তার আগপর্যন্ত যতোটুকু সম্ভব চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।’ তবে অচিরেই এ হাসপাতালে পাঁচটি আইসিইউ বেড পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ জানান, ‘করোনা আক্রান্তদের আইসোলেশন বেডে রেখে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। মনিটরসহ আইসিইউ বেড দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তা পাওয়া যাবে তা ঊর্ধ্বতনরাই বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘গতবছরই সদর হাসপাতালে আইসিইউ বেডসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে আশ্বাস পেয়েছি। বর্তমানে অক্সিজেন ব্যবস্থার কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত যেন পাঁচটি আইসিইউ বেড স্থাপন করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।’
গত এক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি। আইসোলেশনে আছেন ৪৭৮ জন। হাসপাতালে আছেন ৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় (২৬-২৭ এপ্রিল) নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৫২ জন।