বিজয়া সম্মিলন সম্পর্কে জানতে চাইলে, এই অনুষ্ঠানটির মিডিয়া সমন্বয়কারী পরমেশ ভট্টাচার্য বলেন,
“দুর্গাপূজায় শান্তি ও মানব-কল্যানে সকল অশুভ এবং অসুর শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির বিজয় কামনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, পূজার পর আয়োজন করা হয় বিজয়া সম্মিলনের।”
তিনি আরও বলেন,
“বিজয়া সম্মিলন আদতে একটি মিলন উৎসব। মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধন রচনা করা ও সাম্য-সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগরিত করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য।”
“সিডনির ইতিহাসে সম্মিলিত বিজয়া সম্মিলন এটাই প্রথম”, বলেন পরমেশ ভট্টাচার্য।
ক্যাম্পসিতে ওরিয়ন ফাংশন সেন্টারের এই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন শত শত দর্শক-শ্রোতা ও অতিথি। এই বিজয়া সম্মিলন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তুষার রায়।
প্রথমেই বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর নীলাদ্রী চক্রবর্তী’র নেতৃত্বে উপস্থিত কিশোর-কিশোরীরা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে। Credit: Paramesh Bhattacharyaপ্রথমেই বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর নীলাদ্রী চক্রবর্তী’র নেতৃত্বে উপস্থিত কিশোর-কিশোরীরা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে।
শ্রী শ্রী চণ্ডীর স্তোত্র পাঠ আর এর সাথে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা-শঙ্খ ও ঊলুধ্বনি দিয়ে বিজয়া সম্মিলনের আবহ সৃষ্টি করা হয়। দু’জন সিনিয়র দম্পতি যথাক্রমে বাংলাদেশ থেকে আগত সম্মানিত অতিথি, শ্রী মনোরঞ্জন সাহা ও শ্রীমতি সন্ধ্যা সাহা এবং সিডনি কমিউনিটির সদস্য শ্রী মৃণালেন্দু শেখর দে এবং ডা. রমা দে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে বিজয়া সম্মিলন অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন করেন। এরপর পবিত্র গীতা থেকে শ্লোক পাঠ করেন শ্রী জ্যোতির্ময় বিশ্বাস।
শুভ উদ্বোধনীর পর এই বিজয়া সম্মিলন আয়োজনের মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে সকল সংগঠনের পক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পাঠ করেন অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক তুষার রায়।
বাংলাদেশে গত বছর দুর্গাপূজায় সংখ্যালঘুদের উপর যে সহিংস হামলা ও তাণ্ডব চালানো হয়েছিল, তার উপর আকাশ দে’র সম্পাদনায় মিডিয়া টিম একটি সংক্ষিপ্ত ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করে। সেই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের জোর দাবি তোলা হয় এবং এতে আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সংহতি জানানো হয়।
Credit: Paramesh Bhattacharyaএরপর গত বছর দুর্গাপূজার হামলায় নিহত এবং অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অকালে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং সকলের বিদেহী আত্মার পারলৌকিক শান্তি কামনা করা হয়।
“অশুভের বিনাশ হোক, শুচি হোক বিশ্বলোক” সম্মিলনের এই প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন, সিডনি’র কলামিস্ট শ্রী অজয় দাশগুপ্ত। এরপর ইসকন-এর পক্ষ থেকে অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন শ্রী জনার্দন দাস প্রভু।
বৈকালিক চা-চক্রের বিরতির মাঝে অনুষ্ঠানে আগত শত শত পরিবারের সদস্যরা পরস্পরের প্রতি বিজয়ার শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় করেন। আবার ক্ষণিকের জন্য মানুষ ঢাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও উদ্দীপনা প্রকাশে মেতে উঠেন।
এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বটি উপস্থাপনা করেন দেবযানী রায় চৌধুরী। নাচ, গান আর কবিতা দিয়ে সাজানো সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন দর্শক-শ্রোতাগণ।
তারপর ছিল স্থানীয় অতিথি শিল্পী অন্তরা সিনহা ও শ্যামতনু ব্যানার্জি’র গান এবং কোলকাতা থেকে আগত বাচিক শিল্পী সাম্য কার্ফা’র আবৃত্তি।
‘ভালো সংস্কৃতিকে আমরা দেবভাব হিসেবে গ্রহণ করি, আর খারাপ সংস্কৃতিকে অসুর হিসেবে সাংকেতিকভাবে চিহ্নিত করি’: ড: নিমাই কর্মকারপরিশেষে “বিজয়া সম্মিলন ২০২২” উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ড. সমীর সরকার এই সম্মিলিত ‘বিজয়া সম্মিলন’-এর সাথে যুক্ত সকল সংগঠন-সহ সকল স্বেচ্ছাসেবক, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্পনসরদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন,
“একসাথে সবাই মিলে শারদ আনন্দ উপভোগ করাটা একটি বিশেষ অনুভূতি। এই মিলন উৎসবে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত এবং অভিভূত।”
সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আর সক্রিয় সহযোগিতায় ভবিষ্যতেও এ রকম আয়োজন করার আশা রাখেন বলে জানান তিনি।