লিওনেল মেসি চেষ্টা কম করেননি। নিজে দারুণ ফ্রি-কিকে একটা গোল করেছেন। আরও গোল করানোর চেষ্টা করেছেন অনেক। কিন্তু গোল তো হয়ইনি, উল্টো দিকে আর্জেন্টিনা গোল খেয়ে বসেছে।
রিও ডি জেনিরোতে শেষ পর্যন্ত আজ চিলির সঙ্গে ১-১ গোলের ড্রতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আর্জেন্টিনাকে। মেসির গোলের পরও তাই জয় দিয়ে এবারের কোপা আমেরিকা শুরু করা হলো না লিওনেল স্কালোনির দলের।
৩৩ মিনিটে দারুণ ফ্রি-কিকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি, ৫৭ মিনিটে চিলিকে সমতায় ফেরানো গোলটি করেন এদুয়ার্দো ভারগাস। মূলত চিলি পেনাল্টি পেলেও সেটি থেকে আর্তুরো ভিদালের শট ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ফিরতি বল জালে জড়ান ভারগাস।
আর্জেন্টিনার একাদশে চমক বলতে তেমন ছিল না। গতকাল থেকে টুইটারে যে একাদশ খেলবে বলে শোনা যাচ্ছিল, সেটিই নামিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। গোলপোস্টে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। তাঁর সামনে ৪-৩-৩ ছকে রক্ষণের কেন্দ্রে লুকাস মার্তিনেজ কুয়ার্তার সঙ্গী নিকোলাস ওতামেন্দি; আর ডানপাশে গনসালো মন্তিয়েল ও বাঁ পাশে নিকোলাস তাগলিয়াফিকো।
মাঝমাঠে লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সঙ্গী রদ্রিগো দে পল ও জিওভান্নি লো সেলসো। আর আক্রমণে লিওনেল মেসির সঙ্গী হয়েছেন লওতারো মার্তিনেজ ও নিকোলাস গঞ্জালেস।
ম্যাচের শুরুর পাঁচ-ছয় মিনিটে চিলিরই দাপট ছিল। পঞ্চম মিনিটে আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্তিনেজ একবার আটকে দেন চিলির ভারগাসের শট। ১২ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে লো সেলসোর দারুণ পাসটাকে অল্পের জন্য জালে পাঠাতে পারেননি আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার মার্তিনেজ।
চার মিনিট পর আবার আর্জেন্টিনার আক্রমণ। আবার লো সেলসোর ফ্লিক, এবার নিকোলাস গঞ্জালেসের উদ্দেশে। গঞ্জালেসের শটটাতে বিষ ছিল, তবে চিলি গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো দারুণভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে বাঁচান।
দুই মিনিট পর আবার লো সেলসো-গঞ্জালেস সমন্বয়। ম্যাচের ২০ মিনিট পেরোনোর আগেই তিনবার গোলের সুযোগ পাওয়া গঞ্জালেসের অন্তত একটা গোল তো করাই উচিত ছিল!
আর্জেন্টিনার গোলের অপেক্ষা অবশেষে ৩৩ মিনিটে ঘুচিয়েছেন মেসি। বক্সের একটু বাইরে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। দারুণ বাঁকানো শটে সেটিকে জালে জড়িয়ে দেন মেসি। এক সময়ে বার্সেলোনার অনুশীলনে মেসির এমন ফ্রি-কিক হয়তো অনেক সামলেছেন বর্তমানে স্পেনেরই ক্লাব রিয়াল বেতিসের খেলা ব্রাভো। কিন্তু এবার সে অভিজ্ঞতা কাজে এল না।
এ নিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ১৪৫ ম্যাচে ৭৩ গোল হলো মেসির। এর মধ্যে ৩৯টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে – যে পরিসংখ্যানে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে মেসি পেছনে ফেলেছেন গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে।
৩৮ মিনিটে লওতারো মার্তিনেজ দারুণ সুযোগ হাতছাড়া না করলে আরও এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টা আঘাত হানতে বেশি দেরি করেনি চিলি। ৫৩ মিনিটে প্রথমে মনে হয়েছিল চিলির ভারগাসের শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার মার্তিনেজ, কিন্তু পরে ভিএআরে দেখা যায়, সেই শট নেওয়ার সময় বক্সে ভারগাসকে ফাউল করেছেন আর্জেন্টিনা লেফটব্যাক তাগলিয়াফিকো। ব্যস! পেনাল্টি পেল চিলি।
সেখানে আবার নাটক! পেনাল্টি থেকে ভিদালের শট প্রথমে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মার্তিনেজ। কিন্তু ফিরতি বল সবার আগে ধরে জালে পাঠান ভারগাস।
আর্জেন্টিনা এরপর চেষ্টা কম করেনি। ৭১ মিনিটে মেসির শট ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। ৮০তম মিনিটে নিকোলাস গঞ্জালেস কীভাবে গোল পাননি, সেটাই বরং আশ্চর্য! বক্সের দিকে দারুণ চিপে পাস দেন মেসি, গঞ্জালেসের উদ্দেশে। কিন্তু গঞ্জালেসের হেড উড়ে যায় বক্সের ওপর দিয়ে।
যোগ করা সাত মিনিট সময়ের প্রথমটিতে মেসি একবার দারুণ লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন। চিলি গোলকিপার ব্রাভো সেবারে পারেননি শট ফেরাতে, কিন্তু চিলির ডিফেন্ডার এনজো রোকো সে যাত্রায় মেসিকে দ্বিতীয় গোল বঞ্চিত করেন।