মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ক্লিনিকে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন। মন্ত্রীর টিকা নেওয়ার সেই ছবি ও বক্তব্য তখন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়।
হঠাৎ করেই আজ শনিবার আ ক ম মোজাম্মেল হকের টিকা নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি টিকা নেওয়ার ‘অভিনয়’ করছেন।
স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওর নিচে মানুষ নানা ধরনের মন্তব্যও করছেন। যার মূল ভাষ্য হচ্ছে, মন্ত্রী টিকা না নিয়েও টিকা নেওয়ার ‘অভিনয়’ করেছেন।
কিন্তু মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন, ভিডিওটিতে দেওয়া বার্তা সত্য নয়, ভুয়া। এটি ইচ্ছে করে ছড়ানো হয়েছে। এবং তিনি এ ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে শুরু হয় গণটিকাদান কর্মসূচি। এ সময় বিভিন্ন জায়গায় এই টিকা নিয়ে কিছু বাড়াবাড়ির ঘটনাও ঘটে। যেমন- কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি নিজেই নার্সের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে টিকা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। আবার কোনো কোনো জনপ্রতিনিধির টিকা নেওয়ার ‘অভিনয়ের’ ভিডিও ভাইরাল হয়। এসব ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলেরও শিকার হন জনপ্রতিনিধিরা।
এই রকম একটি প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর ভিডিওটিও ভাইরাল হলো। তবে মন্ত্রী নিজেই আজ শনিবার বিকেলে এই ভিডিওটি ব্যাপারে এনটিভি অনলাইনকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, এই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিও সত্যি এবং সেটিও সেদিনকারই। তবে এর বার্তা ভুল।
গত বছরের ১২ জুন গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তাঁর স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু (৭১) ও তাঁর একান্ত সচিব হাবিবুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হন। পরদিন মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএইচএম) ভর্তি হন। মন্ত্রী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু আর ফিরতে পারেননি। টানা ১৬ দিন তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৯ জুন আ ক ম মোজাম্মেল হক তাঁর ৪৭ বছরের জীবনসঙ্গিনীকে হারিয়ে ফেলেন। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়েই এখন তাঁর সংসার।
করোনার গণটিকাদান শুরুর পর প্রথম দিকেই সচিবালয় ক্লিনিকে অন্যান্য মন্ত্রী-এমপির মতোই টিকা গ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী।
যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সেদিন তিনি ঠিকই টিকা নেন। এর ভিডিও এবং ছবিও তুলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তাঁর টিকা নেওয়া শেষ হওয়ার পর সেখানে আরও দুজন টিভি সাংবাদিক আসেন। তাঁরা মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন যে, তাঁরা টিকাগ্রহণের ছবি পাননি। মন্ত্রী যদি ‘টিকা দেওয়া হচ্ছে’ এমন করে একটু বসেন, তাহলে তাঁরা ভিডিও ও ছবি নিতে পারেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ওই দুজন সাংবাদিকের অনুরোধেই আমি সরল বিশ্বাসে পুনরায় চেয়ারে গিয়ে বসি। সেখানে তখন আরও সাংবাদিক ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। আমি চেয়ারে বসার পর তাঁরা ভিডিও করেন।’
সেই ভিডিওটিই ভাইরাল হয়েছে দাবি করেন মন্ত্রী। ভিডিওটি দেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কারণ, এই ভিডিওটির বার্তা ভুয়া। টিকা নেওয়ার অরজিনাল ভিডিওটি ভাইরাল হলো না, অথচ একটি ভিডিওকে ভাইরাল করে ভুল ও মিথ্যা বার্তা দেওয়া হলো, যা উচিত হয়নি। এটা নিন্দনীয়।’
টিকা গ্রহণের সময় অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি যখন টিকা গ্রহণ করি তখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনেক সাংবাদিকও ছিলেন। আপনি তাঁদের কাছেও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেন।’
মন্ত্রীর টিকা গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন এমন দুজন সাংবাদিকের সঙ্গে বিকেলে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। এদের একজন একটি অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন রাসেল। তিনি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “সেদিন একজন টিভি সাংবাদিক ও একজন ক্যামেরাপারসন পরে এসে মন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলেন, ‘স্যার, আমরা ছবি পাইনি। ছবিটা নিতে যদি একবার চেয়ারে বসে সহযোগিতা করতেন।’ তারপর মন্ত্রী পুনরায় চেয়ারে গিয়ে বসেন। এরপরের কাণ্ড তো ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে।’’
সেদিন সচিবালয়ে টিকা গ্রহণের পর অনুভূতি জানতে চাইলে হাসতে হাসতে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘খুবই স্বাভাবিক, মনেই হয়নি যে টিকা নিলাম। বুঝতেই পারিনি কখন টিকা পুশ করেছে। পরে সেবিকা বলল যে, টিকা পুশ করা হয়ে গেছে। কোনোরকম খারাপ কিছু মনে হওয়া বা ব্যথা পাওয়া এমন কিছুই নয়। অত্যন্ত সুন্দরভাবে টিকা দিয়েছে। আমার ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখ আগে ছিল, জ্বরের কারণে আমি প্রথমদিন টিকা নিতে পারিনি। পরে আবার রেজিস্ট্রেশন ট্রান্সফার করে আজ টিকা নিয়ে নিলাম।’