Home International ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে হুমকির মুখে যুক্তরাজ্যের ‘ফ্রিডম ডে’

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে হুমকির মুখে যুক্তরাজ্যের ‘ফ্রিডম ডে’

128
0

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে যুক্তরাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। বিশেষ করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কোভিডের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে নতুন সংক্রমণের ৯০ শতাংশেরও বেশি ঘটছে এই ভ্যারিয়েন্ট থেকে। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কায় এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যের ফ্রিডম ডে বা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন পিছিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আর যুক্তরাজ্যে যেভাবে ডেল্টা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তাতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশটির কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এই ভ্যারিয়েন্ট মার্কিন মুলুকে নতুন করে করোনার আরও একটি ঢেউ তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাজ্যে জুলাই নাগাদ লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল সরকারের, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটিও ভেস্তে যেতে বসেছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর পক্ষ থেকেও সরকারকে এ বিষয়ে আরও অপেক্ষার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে ভারতীয় এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অনেক সহজে এটি সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি এটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে যারা শুধু টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে, তাদের সুরক্ষাকবচ তৈরিতে এটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আর স্বভাবতই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যত কম হবে, হাসপাতালগুলোতেও রোগীদের চাপ তত বাড়বে।

যুক্তরাজ্যের সরকারি সংস্থা পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) বলছে, যুক্তরাজ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের যোগসূত্র রয়েছে। তবে হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে নতুন সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড বলছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় স্থানবিশেষে প্রতি সাড়ে চার থেকে সাড়ে ১১ দিনের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ দ্বিগুণ হচ্ছে। বর্তমানে কোভিডের ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের জন্য নতুন কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যাচ্ছে। এতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা সহজ হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান নির্বাহী ড. জেনি হ্যারিস। ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, ‘দেশজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।’

ভ্যাকসিনের একটি মাত্র ডোজের চেয়ে দুইটি ডোজ নেওয়া থাকলে সেটি আরও অধিক সুরক্ষা দেয় বলে জানান ড. জেনি হ্যারিস। তবে একইসঙ্গে তিনি বলেন, টিকা মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমালেও এতে করে ঝুঁকি শতভাগ চলে যায় না। পরিসংখ্যান বলছে, গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ৭ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৩৩ হাজার ২০৬ জনের ডেল্টা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৫৭৩ জনই ভ্যাকসিন নেয়নি। পুরোপুরিভাবে ভ্যাকসিন নিয়েছে এক হাজার ৭৮৫ জন। টিকার একটি ডোজ নিয়েছে সাত হাজার ৫৫৯ জন। বাকিদের টিকা গ্রহণের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ৭ জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ৩৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জনেরই ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ নেওয়া ছিল, ৮৬ জন একটি ডোজ নিয়েছেন। ২৫১ জন কোনও ভ্যাকসিন নেননি। বাকি চার জনের ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়া ৪২ জনের ২৩ জন কোনও ভ্যাকসিন নেননি। এছাড়া ১২ জন টিকার উভয় ডোজ এবং সাত জন একটি করে ডোজ নিয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ১৪ জুন লকডাউনের বিভিন্ন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল তার। তবে এর দুই দিন আগে ১২ জুন শনিবার তিনি বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বিলম্ব করতে তার সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

বরিস জনসনের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তার সরকারকে করোনা মোকাবিলার কৌশল বা কর্মপদ্ধতি পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে এক মাস বিলম্ব করতে পারে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে আগামী ১৯ জুলাই বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে দেওয়া হতে পারে।

এদিকে যুক্তরাজ্যে ডেল্টা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে মার্কিন প্রশাসনেও। বাইডেন প্রশাসনের আশঙ্কা, যুক্তরাজ্যে যেভাবে ভারতীয় এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সেক্ষেত্রে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্রেও করোনার আরেকটি ঢেউ তৈরি করতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে মোট করোনা সংক্রমণের ছয় শতাংশেরও বেশি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। তবে এ সংখ্যা বাড়ছে, অনেকটা যেভাবে ইতোপূর্বে যুক্তরাজ্যেও হয়েছিল।

ফেডারেশনের অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস-এর সিনিয়র ফেলো এবং মহামারি বিশেষজ্ঞ এরিক ফিগল-ডিং। তার ধারণা, আগামী মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রাদুর্ভাব বাড়বে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে ভ্যাকসিনেশনের হার কম সেসব রাজ্যে ভারতীয় এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঢেউ তুলতে পারে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বিজনেস টুডে, দ্য হিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here