মহাকালের পঞ্জিকা থেকে ঝরে গেছে ২৮টি বছর। তাও ফুটবলে সুদিন ফিরছিল না আর্জেন্টিনায়। লিওনেল মেসির হাত ধরে দীর্ঘদিনের গ্রহণকালের অন্ধকার দূর হয়েছে অবশেষে। কোপার ফাইনাল জিতে আর্জেন্টিনা এখন সাফল্যের জোছনায় আলোকিত একটি দল। মারাকানার ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা খরা কাটিয়েছে মেসির দল।
অথচ এই কোপার মঞ্চেই বার বার ব্যর্থ হতে হয়েছে মেসির দলকে। ২০১৫, ২০১৬ তে দুবার কাছে গিয়েও পরম আরাধ্য শিরোপা ছোঁয়া হয়নি। এমনকি ২০১৪ বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হতে হয়েছিল। এবারের ফাইনালে গোল না পেলেও মেসির হাত ধরেই এলো সাফল্য। দলকে পৌঁছে দিয়েছেন শিরোপার দুয়ারে। এমনকি কোপা জিতে মেসি এমন চূড়ায় উঠলেন, যা ম্যারাডোনাও পারেননি!
টাইব্রেকারে জেতা সেমি থেকে ৫ পরিবর্তন আনেন স্ক্যালোনি। শুরুর একাদশে ফিরেছেন ডি মারিয়াও। তাতেই হয়েছে বাজিমাত। অপর দিকে অপরিবর্তিত দল সাজান ব্রাজিল কোচ তিতে।
শুরুতে বল দখলে দুই দলের আধিপত্য ছিল প্রায় সমানে সমান। আক্রমণেও তাই। তবে প্রথম ২০ মিনিট পর্যন্ত ব্রাজিলের আক্রমণভাগে হানা দিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। বরং ব্রাজিল ভীতি ছড়িয়েছে। ম্যাচে ফাউল করে খেলার প্রবণতাও ছিল বেশি।
১৩ মিনিটে ব্রাজিল ভালো সুযোগ পেয়েছিল। নেইমার বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের কারণে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। মেসি-মার্টিনেজরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ২২ মিনিটে তাতে সফলও হয় তারা। দে পলের লং থ্রু থেকে ডিফেন্ডার রেনান লোদি ঠিক মতো ক্লিয়ার করতে পারেননি, দি মারিয়া বল পেয়ে বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলকিপার এদেরসনের মাথার ওপর দিয়ে বা পায়ে সুন্দর ফিনিশিংয়ে গোল করে এগিয়ে দেন আর্জেন্টিনাকে। ২০০৪ সালে সিজার দেলগাদো সবশেষ আর্জেন্টিনার হয়ে গোল পেয়েছিলেন। এবার অনেকদিন পর দি মারিয়া গোল পেলেন। ২৯ মিনিটে দি মারিয়ার শট রক্ষণে এসে বাধাপ্রাপ্ত হলে ব্যবধান বাড়ানো যায়নি।
ব্রাজিলও গোল শোধে হানা দিয়েছে। নেইমার-পাকেতারা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গোলকিপার মার্তিনেজকে বড় পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ধার বাড়ে ব্রাজিলের। ৫২ মিনিটে রিচার্লিশন গোল করেছিলেন। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়ায় বাতিল হয়ে যায় সেই গোল। ৫৫ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করে ব্রাজিল। ডানপ্রান্ত দিয়ে নেইমার বল দিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু রিচার্লিশনের দুর্বল শট সহজেই রক্ষা করতে পেরেছিলেন এমি মার্তিনেজ।
৬৫ মিনিটে মার্কুইনহোসের ভুলে বল নিয়ে ব্রাজিলের বক্সে ছুটেছিলেন মেসি। ভালো সুযোগ থাকলেও তার শট ব্লক করে দেন ব্রাজিল ডিফেন্ডাররা। ৭১ মিনিটে নেইমারের কল্যাণে গোলের সুযোগ ছিল। কিন্তু বক্সে পাকেতা বল পেলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
৭৩ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে গোলের চেষ্টা করেছিলেন আকুনা। কিন্তু মাটি গড়ানো তার শট সরাসরি চলে যায় ব্রাজিল গোলরক্ষকের কাছে।
শেষ দিকে বার বার ত্রাস ছড়ালেও ম্যাচে আর ফিরতে পারেনি ব্রাজিল। বরং ফাউলের ছড়াছড়ি ছিল বেশি। নেইমারকেও টার্গেটে পরিণত করেছিলেন আলবিসেলেস্তেরা। আক্রমণের ঢেউ উঠলেও সেলেসাওদের আক্রমণগুলো বাধা পাচ্ছিলো আর্জেন্টিনার রক্ষণে। আবার এমি মার্তিনেজও কম ছিলেন না।
তাতে দলীয় সাফল্যে আর্জেন্টিনা কোপার শিরোপা ঘরে তুললো ১৯৯৩ সালের পর।