Home Bangladesh ব্যবসায়ীদের হয়রানি, কাপ্তানবাজার ও ঠাটারীবাজার বন্ধ

ব্যবসায়ীদের হয়রানি, কাপ্তানবাজার ও ঠাটারীবাজার বন্ধ

44
0

রাজধানীর কাপ্তানবাজার ও ঠাটারী বাজারের দোকানমালিকদের হয়রানির প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছেন দোকানদাররা। দোকানমালিকদের অভিযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইজারাদার মো. কামরুজ্জামান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ আহম্মেদ মন্নাফীর লোকজন ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা ও পুলিশি হয়রানি করে।

কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম স্টোরের মালিক ফখরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে তাকে কোনও কারণ ছাড়াই ওয়ারী থানা পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। পরে সব ব্যবসায়ী থানায় তাকে আনতে গেলে ও তার আইনজীবী তদন্তকারী অফিসারকে ফোন করলে তড়িঘড়ি করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান।

তিনি আরও জানান, গত সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে ইজারাদার কামরুজ্জামান ও তার লোকজন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্ত্রধারী বাহিনী দোকানদারদের ওপর হামলা আক্রমণ করে দোকানদারদের মারধর করে দোকান ভাঙচুরসহ ব্যাপক চালায়। কিন্তু ওয়ারী থানা পুলিশ এতে হস্তক্ষেপ করেনি। এর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাপ্তানবাজার, ঠাটারী বাজারের সব দোকান বন্ধ ঘোষণা করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে দোকান বন্ধ অবস্থায় আছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৯৬ সালে একতলা মার্কেটটিতে মোট ১৯৯ জন ব্যবসায়ী সিটি করপোরেশন থেকে অস্থায়ী বরাদ্দ ও ২০১৮ সালে চূড়ান্ত বরাদ্দ পায়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ভেঙে ফেলা হলে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা তাদের দোকানের সামনের খোলা অংশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালান।

পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এই খোলা অংশ ইজারা দিতে চাইলে তারা প্রতিবাদ জানান। কিন্তু ডিএসসিসি গত ১৬ নভেম্বর মো. কামরুজ্জামানকে এ অংশ ইজারা দেয়। কামরুজ্জামান টাকা আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া শুরু করেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা এ ইজারাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গেলে ডিএসসিসির নতুন করে ইজারা কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। গত ১৭ নভেম্বর বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

রুলে নতুন করে ইজারা জারির বিষয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতেও বলা হয়েছিল। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৯৯ দোকানদারের ওপর কোনও হয়রানি করা যাবে না মর্মেও বলা হয়েছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, এই আদেশ অমান্য করে স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন ও জনৈক ইজারাদার কামরুজ্জামানের লোকজন বাজারে মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের ইজারার টাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের হুমকিসহ বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয় এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা গত ২৮ নভেম্বর  প্রতিবাদস্বরূপ দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে এবং বাজারে মানববন্ধন করে। এবং এই অবৈধ ইজারা বাতিলের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে।

এ বিষয়ে বুধবার (৩০ নভেম্বর) কাপ্তানবাজারের মামুন মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী অবৈধ ইজারাদার ও তাদের সহযোগীদের অভিযুক্ত করে ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘ব্যবসায়ীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হবে।’

এই অভিযোগ বিষয় জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ আহম্মেদ মন্নাফীর মুঠোফোন নম্বরে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনেই বাজারের সামনে জায়গা ইজারা দিয়েছেন।

হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইজারাদার হামলা করেছে, এ রকম কোনও বিষয়ে আমরা জানি না। আমাদের কেউ অভিযোগও করেননি। সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের সুরক্ষার দায়িত্বও সিটি করপোরেশনের। তাদের সিটি করপোরেশনের কাছে অভিযোগ করা উচিত।’

রাজধানীর ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের দোকান নিয়ে একটি সমস্যা হয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে। পরে ব্যবসায়ীরা এলাকায় মাইকিং করলে সবাই জড়ো হয়। এ বিষয়ে আদালতের একটি আদেশ আছে। ব্যবসায়ীদের স্থানীয় প্রভাবশালীরা মারধরের বিষয় থানায় খবর দিলেও পুলিশ যাননি বলে অভিযোগ করেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই ফোর্স পাঠিয়েছি। আর এখন তো কিছু হলেই, সবাই জাতীয় পরিসেবা ৯৯৯ ফোন করেন। এই ঘটনায়ও ৯৯৯ ফোন করে তারা। ওই মারধরের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here