২০০৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে নকআউট পর্বে উঠেছে সকারুরা। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের একাদশ দিনে গ্রুপ ডি-এর এই ম্যাচে শক্তিশালী ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করেছে। ম্যাচের ৬০তম মিনিটে গোলটি করেন ম্যাথিউ লেকি।
ডেনমার্কের বিরুদ্ধে হেরে গেলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য টুর্নামেন্টের সমাপ্তি ঘটতো।
খেলার প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময়, সকারুদের বেশ চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
ডেনমার্ক শুরুর ৪৫ মিনিটে আধিপত্য বিস্তার করে, কিন্তু গোল পেতে ব্যর্থ হয় দলটি। এ সময় অস্ট্রেলিয়ানরা ব্যস্ত ছিল রক্ষণভাগ সামলাতে।
তবে অস্ট্রেলিয়ানদের এগিয়ে রেখেছে ডেনস-এর ফিনিশিংয়ের ক্ষমতা।
রিলি ম্যাকগ্রি যখন ম্যাট লেকিকে বড় পাস দেন, তখন তিনি আক্রমণ ভাগে দুই ডেনিশ ডিফেন্ডারের প্রতিরোধের মধ্যে ছিলেন।
লেকি ধৈর্য ধরে ড্রিবল করলেন, অসাধারণ দক্ষতায় বল নিয়ে অবশেষে একজন ডিফেন্ডারের আয়ত্তের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হন, নিজের দিকে কাট-ব্যাক করে পরের শটে সোজা বল পাঠান জালে।
ম্যাচের পরে, গোলদাতা লেকি সে সময়ের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “সেই মুহুর্তে, সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যে সত্যিই খুব বেশি চিন্তা করার থাকে না। আমি দারুন একটা পাস্ পেয়েছিলাম। যেভাবে শট নিয়েছিলাম তাতে একজন গোলরক্ষকের পক্ষে বাঁচানো কঠিন ছিল। আমি দেখলাম বল জালে ঢুকে যাচ্ছে। আমি খুব উত্তেজিত, এবং দারুন খুশি হয়েছিলাম।”
রাউন্ড অফ সিক্সটিনে উঠতে সকারুদের বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। শক্ত প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ৪-১ গোলে হারার পর তিউনিসিয়ার বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় অস্ট্রেলিয়াকে আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে।
এদিকে তিউনিসিয়া তাদের ম্যাচের ৫৮ তম মিনিটে ইতিমধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা ফ্রান্সের বিপক্ষে জয় পায়।
তিউনিসিয়ার জয়ের ফলে সকারুরা ড্র করলে, তিউনিসিয়া রাউন্ড অফ সিক্সটিনে উঠে যেত। তাই জয় ছাড়া বিকল্প ছিলোনা অজিদের।
অস্ট্রেলিয়ানদের জয়ে আবেগ উপচে পড়ে খেলার মাঠে। ১২,০০০ কিলোমিটার দূরে ঘুমন্ত অস্ট্রেলিয়া যেন জেগে ওঠে।
মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কোয়ারে বড় স্ক্রিনে ম্যাচটি দেখার জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী জড়ো হয়েছিল। জয়ের উল্লাসে আর গগন বিদারী শব্দে কেঁপে উঠে পুরো এলাকা।
১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোতে উঠেছে সকারুরা।
কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড বলেন যে এই সাফল্য এসেছে টীম কালচার থেকে, আমি দলগত সংস্কৃতি এবং বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। যদি এটি না থাকে তবে আপনি একে অপরের জন্য লড়াই করতে পারবেন না।
সকারু ক্যাপ্টেন ম্যাথিউ রায়ান বলেন যে “এটি আমাদের সাড়ে চার বছরের পরিকল্পনা এবং ত্যাগের ফল। এটি দারুন অনুভূতি।”
আগামী রোববার অস্ট্রেলিয়ান ইস্টার্ন টাইম ভোর ছয়টায় সকারুদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ সি-তে শীর্ষস্থান দখল করেছে আর্জেন্টিনা, তাই গ্রুপ ডি-এর রানার্স-আপ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এখন রাউন্ড অফ সিক্সটিনে তাদের মুখোমুখি হবে।
এর মানে অজিরা এমন এক খেলোয়াড়ের সম্মুখীন হবে যাকে কিনা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবেই মনে করেন অনেকে; লিওনেল মেসি এমনই এক ফুটবলার যিনি প্রয়াত দিয়েগো ম্যারাডোনারই অনুকরণ করেন।
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মোকাবেলা বেশ কঠিনই হবে।
তবে সকারু স্ট্রাইকার মিচ ডিউক বলেছেন যে, এই চ্যালেঞ্জ নিতে অস্ট্রেলিয়ান দল পিছপা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, “আমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করব। ফ্রান্স, তিউনিসিয়া এবং ডেনমার্কের কাছ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়েছি আমরা, এতো দারুন অর্জন, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”