ইন্দোনেশিয়ার আরিস সুহরিয়ান্তো তাঁর স্ত্রীকে শেষবার দেখেছিলেন হাসপাতালের জানালা দিয়ে। কিন্তু সদ্যোজাত সন্তানের মুখ তিনি কখনো দেখতে পাননি।
সুহরিয়ান্তোর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রিনা ইসমাবতী (৪৩) ও তাঁদের তিন সন্তানের অন্য দুজন গত মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি একে স্বাভাবিক সর্দি বলেই ভেবেছিলেন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় তিনি তাঁদের করোনা পরীক্ষা করান। পরীক্ষার ফলাফলে সুহরিয়ান্তোসহ পুরো পরিবারের করোনা পজিটিভ আসে।
ইসমাবতীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ইসমাবতী তাঁর স্বামীকে কখনো কখনো হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাতেন। সুহরিয়ান্তো বলেন, একদিন তাঁর স্ত্রী হোয়াটসঅ্যাপে লিখছেন যে তাঁর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না।বিজ্ঞাপন
এদিকে ইসমাবতীর সন্তানের কথা ভেবে চিকিৎসকেরা সিজার করে ফেলেন। গত মাসে যখন রিস্কি অলিয়া নামের ওই সন্তানের জন্ম হয় তখন সুহরিয়ান্তোর নিজের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ সময় তাঁর স্ত্রী তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিতে বলেন। কারণ, ওই সময় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে অনেক রোগী মারা যাচ্ছিল। কিন্তু ইসমাবতীর অবস্থা বাড়িতে নেওয়ার মতো ছিল না।
গত ২২ জুন নবাগত সন্তান রিস্কি হাসপাতালে মারা যায়। সুহরিয়ান্তো তাঁর ওই সন্তানের ছবি কেবল হোয়াটসঅ্যাপেই দেখেছিলেন। পরের দিন ইসমাবতীও মারা যান।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুহরিয়ান্তোর স্ত্রী ও সন্তান হারানোর এই ঘটনা ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশটি এখন এশিয়ার করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক হাজারো সংক্রমণ ও কয়েক শ মৃত্যুর ঘটনা দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ডেলটা এখন দেশটিতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনাভাইরাসে স্বজন হারানো মানুষের বিভিন্ন পোস্ট এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলো জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। খননযন্ত্রগুলো লাশ সৎকারের জন্য মাটি খুঁড়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দৈনিক মজুরিতে জীবনযাপন করা সুহরিয়ান্তোর মতো লাখ লাখ মানুষের পক্ষে পৃথক থাকা (আইসোলেশন) অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচারে দেশটিতে টিকাদানের হার ৬ শতাংশের কম।
দেশটিতে ইতিমধ্যে ২৭ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং সেখানে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এখনো দেশটিতে করোনা সংক্রমণ চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেনি।
অথচ গত বছর পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে হঠাৎ করে গত জুন মাস থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া কোভিড-১৯ বিপর্যয়ের কিনারায়।
এ মাসের শুরুতে ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুডি গুনাদি সাদিকিন বলেন, ‘উত্সব ছুটির পরেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।’
১০ জুলাই থেকে লকডাউন শুরু হয় দেশটিতে। এখন সেখানে দিনে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রচেষ্টা চালু রেখেছে তারা।