করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর আরোপ করা কড়াকড়ি শিথিল করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথ আবার খুলছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস থেকে সোমবার জানানো হয়েছে, করোনার পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়া বিদেশি নাগরিকেরা আগামী নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের করোনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় দেশগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার এই সিদ্ধান্ত নিল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের মিত্র ফ্রান্সের সম্পর্কের ব্যাপক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ সমন্বয়ক জেফ জেন্টস ‘নতুন আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ ভ্রমণ পদ্ধতি’ ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট কোনো দেশের চেয়ে ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হবে। এটা একটা কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্ব দিক হলো, যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করতে হলে বিদেশি নাগরিকদের করোনার পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে।’বিজ্ঞাপন
নতুন আইন অনুযায়ী, পূর্ণ ডোজ টিকা নেওয়া যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে না। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা আরও জানান, নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বিষয় রয়েছে, যেখানে শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
যেসব মার্কিন নাগরিক পূর্ণ ডোজ টিকা নেননি, তাঁরাও দেশে ঢুকতে পারবেন। এ জন্য দেশে প্রবেশের ২৪ ঘণ্টা আগে এবং বাড়ি ফেরার ২৪ ঘণ্টা পর তাঁদের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তবে স্থল সীমান্ত দিয়ে যেসব পর্যটক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে না। এর মানে হলো, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উঠছে না।
২০২০ সালে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরান ও ব্রাজিলে গত ১৪ দিনের মধ্যে থাকা বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় খুশি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিমালায় তিনি ‘আনন্দিত’। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য এটি অসাধারণ একটি উদ্যোগ। দুই দেশের বন্ধুবান্ধব ও পরিবার আবারও একত্র হতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভ্রমণ নীতিমালা ঘোষণার প্রভাবে পড়েছে এয়ারলাইনসের শেয়ারেও। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইএজির শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। ভার্জিন আটলান্টিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাই ওয়েস যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে ভ্রমণ খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।