প্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমিয়ে আনতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কয়েক লাখ ইসরায়েলি নাগরিক দেশটির বিভিন্ন শহরে দশম সপ্তাহের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
আয়োজনকারীরা জানিয়েছে, শনিবারের বিক্ষোভে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয় যা ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ। ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো বলছে সমাবেশে আড়াই থেকে তিন লাখ লোক অংশ নেয়।
আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) আলোচনার জন্য উত্থাপিত হতে যাওয়া বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ক বিলটি স্থগিত রাখতে ও আলোচনার জন্য সময় নিতে জনতার দাবি ক্রমশ জোড়ালো হয়ে ওঠছে দেশটিতে। খবর আলজাজিরার।
তেল আভিভ শহরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রযুক্তি উদ্যোক্তা রান শাহর নামের এক ব্যক্তি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছি কেননা নতুন সরকার ইসরায়েলের গণতন্ত্রের প্রতি সত্যিকার ও প্রত্যক্ষভাবে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।’
তামির গাইসাবরি নামে আরেক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা বিচার বিভাগের সংস্কার নয়। এটা ইসরায়েলকে পুরোপুরি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য একটি বিপ্লব এবং আমি চাই আমার সন্তানদের জন্য ইসরায়েলে গণতন্ত্র থাকুক।’
ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে তেল আভিভে দুই লাখ লোক অবস্থান নেয়। অন্যদিকে পঞ্চাশ হাজারের মতো লোক প্রতিবাদ জানায় দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফাতে। এছাড়া বিরসেবা শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দশ হাজারেরও বেশি নাগরিক।
কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বিক্ষোভ সমাবেশগুলো শেষ হয় যদিও তেল আভিভে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার জন্য পুলিশ তিনজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
আইন কাঠামোর এই পরিবর্তনের উদ্যোগ ইসরায়েলের সবচেয়ে খারাপ অভ্যন্তরীন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক এসব বিক্ষোভ কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংস হয়ে ওঠেছিল। বিরোধী দলগুলো ছাড়াও ব্যবসায়ী নেতারা এবং আইন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা হবে সর্বনাশা।
প্রস্তাবিত আইন অনুসারে যে কমিটি বিচারক নির্বাচন করে সেখানে সরকারের প্রতিনিধিকে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে এবং এর মাধ্যমে সরকার দেশের মৌলিক আইনের সংশোধনী আনতে সুপ্রিম কোর্টের যে অধিকার ছিল তা কেড়ে নেবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বিধান আইনসভায় প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে।
এই সংস্কারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ১২০ সদস্যের পার্লামেন্টে সুপ্রিমকোর্টের কোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করার ক্ষেত্রে ৬১টি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটই হবে যথেষ্ট।
সমালোচকরা বলছেন, এই পরিবর্তন আনলে প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগিদের হাতে সব ক্ষমতা চলে যাবে এবং তা দেশটির ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলবে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, দুর্নীতির দায়ে বিচার কাজ চলতে থাকা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আইনের ফাঁকে রেহাই দিতেই এই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু বলছেন দুর্নীতির মামলায় বিচার কাজের সঙ্গে এই সংস্কারের কোনো সম্পর্ক নেই।