ঢাকা প্রতিনিধি আলী হাবিব জানান, গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীসহ ৪১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অবশ্য এর আগে ৪৯ জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছিল, পরে এই সংখ্যা সংশোধন করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে দেড় শতাধিক। তাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানান, এই মুহূর্তে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সরঞ্জামের কোন ঘাটতি নেই, তবে এর চেয়ে আরো বেশি আহত লোকজন চিকিৎসা নিতে আসলে ঘাটতি হতে পারে।
এই অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে স্থানীয়রা বলছেন, প্রথমে একটি কন্টেইনারে বিস্ফোরণ ঘটলে অন্য কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণে মানুষের হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে দেখা গেছে।A man injured in a massive fire that broke out around midnight Saturday at the BM Inland Container Depot, at Chittagong in south-eastern Bangladesh.AP/AAP
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, যেহেতু কেমিক্যালের মত দাহ্য পদার্থ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে, এর থেকে আগুন অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়েছে, আমরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, কেমিক্যালের ঝাঁজ চোখে লাগছে এবং পানি ঝরছে।
ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিদগ্ধ ১৪ সদস্য ও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ যারা মারা গেছেন তাদের প্রতি আমি জানাই গভীর শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে চারটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কমিটিকে পাঁচ দিন, বন্দর কর্তৃপক্ষের কমিটিতে তিন দিন এবং বাকি দুই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।The scene after a fire broke out at the BM Inland Container Depot, a Dutch-Bangladesh joint venture, in Chittagong, 216 km (134 miles) southeast Bangladesh.AP/AAP
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযানের পাশাপাশি রাসায়নিক দূষণ ঠেকানোর চেষ্টায় কাজ করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে, শনিবার রাতে আগুন লাগার পর থেকে সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য সেখানে নিয়োজিত রয়েছেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে হতাহতদের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের ক্ষতিপূরণের ঘোষণা এসেছে সরকার থেকে। হতাহতদের জন্য নগদ এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
নিহতদের দাফন-কাফন ও সৎকার এবং আহতদের চিকিৎসায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে বলে রবিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তাতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে মানবিক সহায়তা হিসেবে ১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।The body of one of the victims is carried after a fire broke out at the BM Inland Container Depot in Chittagong, 216 km southeast of capital, Dhaka, Bangladesh.AP
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিহত শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া ঘোষণা দিয়েছে। বিএম কন্টেইনার কর্তৃপক্ষ নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএম কন্টেইনারের মালিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে, গুরুতর আহত বা অঙ্গহানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ছয় লাখ টাকা এবং কম আহতদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।
এছাড়া নিহতদের মধ্যে কারও পরিবারে শিশু থাকলে সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে বিএম কন্টেইনারের পক্ষ থেকে। আহতদের চিকিৎসা খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কোম্পানিটি।Smoke rises from a fire that broke out at the BM Inland Container Depot, a Dutch-Bangladesh joint venture, in Chittagong, Bangladesh.AP/AAP
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লেগে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পেছনে দাহ্য পর্দাথের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে সেখানে রাসায়নিক মজুদের অনুমতি ছিল কি না সেই জিজ্ঞাসাও সামনে এসেছে।
ওই কন্টেইনার টার্মিনালে রাসায়নিক থাকার অনুমতির বিষয়ে প্রশ্ন ওঠার মধ্যে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয় বলছে, প্রাণঘাতি এ দুর্ঘটনার পরই তারা প্রথম জানতে পারে সেখানে রাসায়নিক রাখা ছিল। সেখানে দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ বা মজুদের কোনো নিয়ম না মানার কারণেই হয়ত ভয়ানক এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ধারণা।
যদিও ডিপো কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সব ধরনের অনুমোদন রয়েছে। তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন আমদানি ও রপ্তানির কন্টেইনার খালাস ও পরিবহনের জন্য গড়ে তোলা এ ডিপোতে রাসায়নিক মজুদ বা সংরক্ষণ করা হবে কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সীতাকুণ্ডেবিএম ডিপোতে আগুনে রপ্তানির চারশ কন্টেইনার পণ্য পুড়েছে বলে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছেন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা। তারা পুরো হিসাব জানাতে না পারলেও শুধু চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদেরই ১৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পুড়েছে বলে দাবি করছেন।