প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ২৫ জুন শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতু। শনিবার সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপর সেতুর দুই পাড়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন তিনি। এই সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে।
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:
- নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতু
- দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষ এই সেতুর মাধ্যমে যুক্ত হবে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে
- ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে
বাংলাদেশের দক্ষিণপ্রান্তের জনগোষ্ঠীকে রাজধানী ঢাকা-র সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু দেশের মানুষের জীবনে নানা সুফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে; যদিও শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল এই সেতুতে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে তাদের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে দেশের টাকায় এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাAAP/PID BANGLADESH
গত বুধবার গণভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে পারে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান ও দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেলেও নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়াত অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
২০১৫ সালে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ শুরু হলেও এর পরিকল্পনা হয়েছে তারও আগে।
পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতিতে পড়বে ব্যাপক প্রভাব। দীর্ঘদিন পর সড়ক ও রেল, দুই পথেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে এই প্রথমবারের মতো পুরো দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোতে চলে আসবে।
দক্ষিণ বাংলার গ্রামেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে। এই অঞ্চলের ২১টি জেলার কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভোক্তার সমাবেশ যে রাজধানী ঢাকা, তার সঙ্গে অনায়াসে সংযুক্ত হতে পারবে। অন্যদিকে তারা রাজধানী থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে পারবে তাদের গ্রামের ও আশপাশের এসএমই উদ্যোগগুলোর জন্য।
দক্ষিণাঞ্চলেরর সামগ্রিক উৎপাদন, সেবা, পর্যটন, শিল্প-বাণিজ্যেও বিনিয়োগ বাড়বে। বাড়বে কর্মসংস্থান। ২১ জেলায় মানুষের আয়-রোজগার ও জীবনের মান বাড়ার প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে।পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে।AAP/ SOPA Images
অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি অন্তত ৩.৫ শতাংশ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে তখন দেশের জিডিপি বাড়বে অন্তত আরো ১.২৬ শতাংশ।
ট্রান্স এশিয়ান রেল ও সড়ক এই সেতুর মাধ্যমেই যুক্ত হবে। শুরুতে ২৪ হাজার যান চলাচল করবে এই সেতু দিয়ে। প্রতিবছর তা বাড়বে। এডিবি বলছে, ২০৫০ সালে ৬৭ হাজার যান চলাচল করবে এই সেতু দিয়ে।
জরিপে আরো বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুবিধা পাবে এই সেতুর কল্যাণে। দক্ষিণাঞ্চলের দারিদ্র্য প্রতিবছর ১ শতাংশেরও বেশি হারে কমবে।
এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি এসবিএস বাংলাকে বলেন, “পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক ও আমাদের অপমানের বদলা নেবার প্রতীক।“
পদ্মা সেতুতে প্রায় ৩ লাখ টন রড, আড়াই লাখ টন সিমেন্ট, সাড়ে ৩ লাখ টন বালু, প্রায় ২ হাজার ১০০ টন বিটুমিন লেগেছে। এসব উপকরণ দেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই সেতুতে ২০টির বেশি দেশের জনবল, যন্ত্র ও উপকরণ ব্যবহার হয়েছে। সাড়ে ৩ হাজার টন ওজনের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যামার এই সেতুতে ব্যবহার হয়েছে। ক্রেন ব্যবহার হয়েছে ৪ হাজার টনের।
সেতুতে ব্যবহার করা কংক্রিটের কিছু পাথর দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগই আনা হয়েছে ভারত, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করে তারপর কাজ করা হয়েছে।
বিশেষ কিছু রড আনা হয়েছে চীন থেকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য থেকে অ্যালুমিনিয়াম নেওয়া হয়েছে।
এখন অপেক্ষা ২৫ জুন শনিবারের, যেদিন উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতু।