Home Bangladesh পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর: কতটুকু বদলেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট?

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর: কতটুকু বদলেছে পাহাড়ের দৃশ্যপট?

48
0

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। ১৯৯৭ সালের এই দিনে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তিটি সই হয়। এই ২৫ বছরে বদলে গেছে পাহাড়ের জীবন। সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। তবে সম্প্রতি পাহাড়ে হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশ কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য অঞ্চলকে অন্ধকারমুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি ক‌রে‌ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সেই চুক্তির ২৫ তম বর্ষপূর্তি আজ। চুক্তির আগে ও পরে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম (বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি) এবং এখানে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিসহ ১২টি জাতিসত্তার উন্নত জীবনমানসহ তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়নের ব্যাপক কার্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। সরকারের প্রচেষ্টায় দুর্গম অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নে মানুষের জীবনযাত্রার মানেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।

তবে পাহা‌ড়ের বাসিন্দারা বলছেন, শা‌ন্তি চু‌ক্তির প‌রে পাহা‌ড়ে উন্নয়ন হ‌য়ে‌ছে রাস্তাঘাট ও সরকারি স্থাপনাগু‌লোর। কিন্তু মানুষের জীবনে তেমন পরিবর্তন হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম বে‌ড়ে‌ছে ক‌য়েকগুণ। ফ‌লে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়ার খরচ চা‌লি‌য়ে সংসা‌র চালা‌তে হিম‌শিম খা‌চ্ছেন তারা। অ‌নে‌ক পরিবা‌রে ছে‌লে‌মে‌য়ে‌দের লেখাপড়া ব‌ন্ধের উপক্রম হ‌চ্ছে। 

এদি‌কে বীজ, সার ও কীটনাশকসহ ফসল উৎপাদ‌নের সব উপকর‌ণের দাম বে‌ড়ে যাওয়ায় আগের মতো জুম চাষও ক‌র‌তে পার‌ছেন না অ‌নে‌কে। আবার যারা যারা জুম চাষ কর‌ছেন তারাও সময়মতো সার ও কীটনাশক দিতে না পারায় আবাদ কমে লোকসান গুন‌ছেন।

বান্দরবান সদরের ডলৈপাড়ার বাসিন্দা মেহ্লা প্রু মা‌রমা ব‌লেন, ‘চুক্তির ২৫ বছরে পাহাড়ের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো অতো খুন-খারাবি নেই। তবে আগের মতো এখন আর সংসার চালা‌তে পা‌রি না। জু‌মের আবাদও আগের মতো হয় না। যে ফলন হয় তা‌তে খরচ প‌ড়ে যায় দ্বিগু‌ণেরও বে‌শি। ফ‌লে এখন আর জুম চাষও কর‌তে ইচ্ছে ক‌রে না। অন্য কিছু চাষ করবো, সেই উপায়ও নেই।’

বাস‌ স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ইব্রা‌হিম আলী ব‌লেন, ‘২৫ বছরে কাঠামোগত পরিবর্তন হয়তো এসেছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। আমাদের আতঙ্ক কমেছে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি খুব খারাপ। কিছুদিন আগেও যা আয় হতো তা দি‌য়ে ভালোই চল‌ছিলো সংসার। এখন আয় না বাড়‌লেও ব্যয় বে‌ড়ে‌ছে ক‌য়েকগুণ। ছে‌লেমে‌য়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হ‌য়ে‌ছে। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে কীভা‌বে সংসার চালাবো বুঝ‌তে পার‌ছি না।’

জেলা প‌রিষ‌দের সদস্য ও ম্রো নেতা সিং ইয়ং ম্রো জানান, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন দফতরগুলো গত ১৪ বছরে পাহাড়ের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।

জেলা প‌রিষ‌দের সদস্য ও বান্দরবান জেলা আওয়ামী লী‌গের যুগ্ম সম্পাদক লক্ষ্মীপদ দাশ ব‌লেন, ‘১৯৯৭ সালের আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল একটি পিছিয়ে পড়া ও রক্তে রঞ্জিত অশান্তির অঞ্চল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার এই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। ব্যাপক উন্নয়নও করেছে পাহাড়ে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপ‌তি কাজী মুজিবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্বে শান্তি চুক্তি হয়েছে এবং অধিকাংশ মূল শর্তই বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু সন্তু লারমা ও তার সশস্ত্র বাহিনীর চাঁদাবাজি, খুন ও অপরণের কারণে চুক্তির বাকি শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা যা‌চ্ছে না। এ কার‌ণে প্রতিনিয়ত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এতিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়ি থেকে নিজ ইচ্ছায় নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের অনেকেই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরক্বীয়া’র সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব। এ সংগঠনে যুক্ত হওয়া  সমতলে সফল প্রশিক্ষণ শেষ হলে তাদের অস্ত্র চালানো, বোমা তৈরি, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোসহ নানা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ তাদের এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বান্দরবান পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য জেলায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে। এখানকার মানুষ যেন শা‌ন্তি‌তে থা‌কে তার জন্যেও নিরলসভা‌বে কাজ কর‌ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী। 

পাহা‌ড়ের বাসিন্দাদের আশা, পাহাড়ে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ম‌ধ্যে উন্নয়নের রোড মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here