ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে বিভিন্ন পর্যায়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হাট কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনকে পুলিশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশুর প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যানজট ও নিরাপত্তার খাতিরে নির্ধারিত কিছু জায়গায় এবার পশুর হাট না বসানোর অনুরোধ জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেসব জায়গার অনেকগুলোতেই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশুর হাট বসাতে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির পশুর হাটে আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে ইজারাদারদের। পশুর হাটে ঢোকার পথে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থাও রাখতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল সিটি করপোরেশন এলাকা এবং দেশের অন্যান্য পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রচারণা চালানোর কথা বলা হয়েছে। পশুর হাটে আগতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হাট সংলগ্ন এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরবানির পশু পরিবহন, চামড়া পাচার রোধ, মলম পার্টি, জাল টাকার বিস্তার রোধ এবং ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতকে নিরাপদ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের ওপর কোরবানির পশুর হাট বসতে না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে পুলিশ।
সীমান্তের বিভিন্ন পথে গবাদি পশুর প্রবেশ রোধে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হবে। কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে বিজিবিসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে। প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। ইজারাদার, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা বিধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পুলিশ, আনসার ও র্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন সংগ্রহ করে হাটগুলোতে বসাতে ইজারাদারদের বলা হয়েছে। পশুর হাটে হাসিল আদায়ের ব্যবস্থা স্বচ্ছ করার জন্য দৃশ্যমান জায়গায় বড় বড় ব্যানারে ‘হাসিলের হার’ টানিয়ে রাখতে হবে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কোরবানির পশুবাহী নৌযান ও ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গবাদি পশু বহনকারী ট্রাকে হাট ও গন্তব্যের নামের স্টিকার সংযুক্ত করতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম দুই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, আফতাব নগর, রূপনগর, পূর্বাচল, খিলক্ষেত ও উত্তরা ব্রিজ সংলগ্ন ৬ নম্বর সেক্টর এলাকায় কোরবানির পশুর হাট না বসাতে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পশুর হাটের তালিকায় এগুলোর বেশিরভাগ জায়গাতেই হাট বসানোর জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। এবার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় দুটি স্থায়ী হাটসহ ২১টি পশুর হাট বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি দক্ষিণ সিটির এবং ১০টি উত্তর সিটি করপোরেশনের।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বেশির ভাগ পশুবাহী যানবাহন ভারত সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকার বিভিন্ন হাটে প্রবেশ করে। ওই অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে করোনার সংক্রমণের হার বেশি। একটি পশু কেনার জন্য চার-পাঁচ জন মানুষ হাঁটে আসেন। এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। রাজধানীতে পশুর হাটে জাল টাকা, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। কোরবানির পশুবহনকারী পরিবহনে চাঁদাবাজি, ওইসব যানবাহন জোরপূর্বক অন্য হাটে প্রবেশ করানো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।