তুরস্ক প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল
তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক ও উত্তর সিরিয়ায় হওয়া এই ভূমিকম্পের জেরে এখনও শতাধিক লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভূমিকম্পের পর দুই দেশের সীমান্তের উভয় পাড়ের বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ, ভূমিকম্পের পর শক্তিশালী আফটারশক চলতে থাকে এবং ভবনগুলো ধসে পড়তে থাকে।
জানা যায়, তুরস্কের একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে এবং সিরিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল থেকে নবজাতকসহ অন্যান্য রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের আদানা শহরে বাসিন্দা মুহাম্মেত ফাতিহ ইয়াভুস বলেছেন, “আমার বাড়ির কাছে তিনটি ভবন ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে একজন জীবিত ব্যক্তি আমাকে ডাকছিল। তবে আমার গায়ে আর শক্তি ছিল না। পরে উদ্ধারকর্মীরা তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।”
ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল তুরস্কের প্রাদেশিক রাজধানী গাজিয়ানটেপের উত্তরে। এটির কম্পন অনুভূত হয়েছে মিশরের কায়রো পর্যন্ত। ভূমিকম্পটি এমন একটি অঞ্চলে আঘাত হেনেছে, যেটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত।
সিরিয়ার বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বসবাস। যুদ্ধের কারণে দেশটির অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ সেখানে গিয়ে অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এমন ভবনগুলোতে বাস করেন, যেগুলো অতীতের বোমা হামলায় ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হোয়াইট হেলমেট নামে এক সংস্থা বিবৃতিতে জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে শত শত পরিবার।
উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলো আহত রোগীতে কানায় কানায় পূর্ণ।
এসএএমএস মেডিকেল সংস্থা জানায়, একটি প্রসূতি হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল খালি করে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তুরস্ক প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। ১৯৯৯ সালে উত্তর-পশ্চিম তুরস্কে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সোমবারের ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৮ পরিমাপ করেছে। তুর্কিয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর অন্তত ২০টি আফটারশক হয়েছে।
সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা শহর থেকে তুরস্কের দিয়ারবাকির পর্যন্ত উত্তর-পূর্বে ৩৩০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) এরও বেশি বিস্তৃত এলাকায় ভবনগুলো ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় জানিয়েছেন, তুরস্কের গাজিয়ানটেপ ও কাহরামানমারাস প্রদেশে প্রায় ৯০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, “ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলীয় শহর ইস্কান্দারউনে একটি হাসপাতাল ধসে পড়েছে, তবে হতাহতের সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।”
ওকতে সাংবাদিকদের বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, একই সময়ে আমরা অত্যন্ত কঠিন আবহাওয়ার সঙ্গেও লড়াই করছি। দুর্যোগ কবলিত এলাকায় প্রায় ২,৮০০টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।”
তরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এক টুইটে লিখেছেন, “আমরা আশা করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারব।”
তাইওয়ান, রাশিয়া ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ চিকিৎসা সরবরাহ, অনুসন্ধান দল বা অর্থ সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলো ছেড়ে যাওয়ার মানুষের কারণে ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানোর চেষ্টা করা জরুরি দলগুলোর কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।