টানা বর্ষণ ও ভারতের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে নীলফামারীর ডিমলা ডালিয়া পয়েন্টে। বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে তিস্তার বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। এতে তিস্তার আশপাশের ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ভয়াবহ বন্যার কারণে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ওই এলাকায় রেড অ্যালার্ট (লাল সংকেত) জারি করে মানুষজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা দিয়েছে। উজান ও ভাটি অংশে তীব্র স্রোতে নদীর দুই ধারের শত শত একর আমন ধানের জমি ও সবজি বাগান ডুবে গেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়। সেই পানি ১২ ঘণ্টায় ১০৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত সাধুর বাজারের ‘ফ্লাড ফিউজ’ হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনও সময় তা ভেঙে যেতে পারে। এটি ভেঙে গেলে ব্যারাজের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা জানায়, তিস্তার ভয়াবহ বন্যায় এলাকার হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কার্তিক মাসে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা এর আগে ১৯৬৮ সালে একবার দেখেছিল এ এলাকার মানুষ। দীর্ঘ ৬২ বছর পর ফের তিস্তায় এমন বন্যা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি ভারতের দো-মহনী পয়েন্টে বুধবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেই পানি সকাল ৭টায় আরও দুই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুর দুয়ার এলাকা তলিয়ে গেছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, এলাকার জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডান তীর ও গ্রোয়েন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। ওই বাঁধটি ভেঙে গেলে ডান তীর বাঁধসহ এলাকার শত শত বাড়ি নদীতে বিলীন হবে।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘তিস্তা বাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলি জমি এখন পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষজন গবাদি পশুসহ নিরাপদে সরে গেছে।’
খালিশাচাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ‘এলাকার ছোটখাতা, বাইশপুকুর, সুপারীপাড়া গ্রাম এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ২২টি চরের ৫০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।’
অপরদিকে, লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম কালিগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার দহগ্রাম, সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ভোটমারী, কাকিনা, মহিষখোচা, পলাশী খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
চরাঞ্চলের রমজান আলী (৬৫) বলেন, ‘রাতে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আগে কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি যে বাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিবার নিয়ে চরম বিপদে আছি।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা প্রিন্স বলেন, ‘টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট (জলকপাট) খুলে রাখা হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর রাখছি। তিস্তা অববাহিকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।’