Home International তালেবানের উত্থানের মুখে বিনা প্রতিরোধে মাঠ ছাড়ছে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী

তালেবানের উত্থানের মুখে বিনা প্রতিরোধে মাঠ ছাড়ছে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী

118
0

মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের ঘোষণায় যেন আরও চাঙ্গা হয়ে উঠছে তালেবান। ইতোমধ্যেই বহুল আলোচিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়েছে বিদেশি সেনারা। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সেনাকে দেশে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বিদেশি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের ডামাডোলে দেশটিতে আরও প্রভাব বেড়েছে তালেবানের। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দলটি। তালেবানের উত্থানের মুখে অনেক জায়গায় আবার বিনা প্রতিরোধে মাঠ ছাড়ছে সরকারি বাহিনী।

গত মে থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি জেলার দখল নিতে সমর্থ হয়েছে তালেবান। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির উত্তরাঞ্চলে অনেকগুলো জেলায় সরকারি বাহিনী পিছু হটায় অঞ্চলগুলো কাবুল প্রশাসনের হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য শুধু মাঠই ছেড়ে যায়নি; অনেকে এমনকি দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তান সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

শনিবার একদিনেই দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে আফগান বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য। রবিবার তাজিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালেবানদের যোদ্ধারা সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আফগানিস্তানের বদখশান প্রদেশের তিন শতাধিক সরকারি সেনা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। মানবতা এবং সুপ্রতিবেশীর নীতির আলোকে আফগান সেনাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আফগানিস্তানের ৪২১টি জেলার প্রায় এক তৃতীয়াংশই এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের সময়সীমা ঘোষণার পরই দেশজুড়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সমর্থ হয় তালেবান।

কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রস্থানকে নৈতিকতার অভাব হিসেবে দেখছেন বদখশান প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য মহিব উল রাহমান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মনোবলের অভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

মহিব উল রাহমান আক্ষেপ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ জেলা কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই তালেবানের হাতে চলে গেছে। গত তিন দিনে তালেবানের দখলে যাওয়া ১০ জেলার আটটিতেই কোনও প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেনি।

২০০১ সালের অক্টোবরে এই তালেবানকে উৎখাত করেই আফগানিস্তান দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি ছিল, ৯/১১ হামলার নেপথ্যে থাকা ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদা নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে তালেবান সরকার। কাবুল দখল করেও অবশ্য শান্তির নাগাল পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে দুই হাজার ৩১২ জন সেনাকে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে এক হাজার ৮৯৭ জন নিহত সংঘাতের কবলে পড়ে নিহত হয়েছে। বাকি ৪১৫ জনের মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাদের মৃত্যুর সঙ্গে কোনও শত্রুতা বা বৈরিতার বিষয় ছিল না। এই ২০ বছরে আহত হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা। একই সময়ে হতাহত হয়েছে বহু আফগান নাগরিক।

তালেবানের তীব্র প্রতিরোধের মুখে এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য এক পর্যায়ে সেখানে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায় ওয়াশিংটন। এতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ থেকে সরে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় মনোনিবেশ করলে ব্যয় কমে আসে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১০-২০১২ সালে যখন আফগানিস্তানে লক্ষাধিক মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল তখন প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হতো প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বার্ষিক ব্যয় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে রয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডিসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়। এর ফলে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮২২ বিলিয়ন ডলার।

প্রবীণ আফগান নাগরিক মালেক মীর। নিজ দেশে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র; দুই পরাশক্তির আগ্রাসনের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। বিদেশি বাহিনীর উপস্থিতিও কোনও ফল বয়ে আনতে না পারার ঘটনা তাকে মর্মাহত করেছে। মালেক মীরের ভাষায়, ‘তারা তালেবানের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে এসেছিল এবং তাদের (তালেবানের) শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের (মার্কিন বাহিনী) প্রস্থানের সময় তালেবান এতো শক্তিশালী হয়েছে, শিগগিরই যে কোনও সময় তারা ক্ষমতা দখল করবে।’

এই প্রবীণ আফগান নাগরিক বলেন, এতো খুন, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, মানুষের ওপর দুর্দশা চাপিয়ে দিয়ে কী লাভ হলো? এর চেয়ে তারা (মার্কিন বাহিনী) এখানে না আসাই ভালো ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here