টিকটক, উইচ্যাটসহ মোট ৫৯টি চীনা অ্যাপ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গত জুন মাসে ইলেকট্রনিকস ও ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রণালয় থেকে ওই অ্যাপগুলো সাময়িক নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেগুলো চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, চীনের নিষিদ্ধ ঘোষিত অ্যাপগুলোর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয় ভারত সরকার। ওই অ্যাপগুলো কীভাবে ব্যবহারকারীদের থেকে বিভিন্ন তথ্য গ্রহণ করে এবং এসব তথ্য কী কাজে লাগে, তা নির্মাতা সংস্থাগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো যে জবাব দিয়েছে, তাতে ভারত সরকার সন্তুষ্ট হয়নি। তাই অ্যাপগুলো স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গতবছর মোট ২৬৭টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করে ভারত। তার মধ্যে ছিল জনপ্রিয় স্মার্টফোন গেম পাবজি। গত নভেম্বরে পাবজির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঘোষণা করে, ভারতের জন্য তারা বিশেষ ধরনের গেম আনবে। কিন্তু পরে জানা যায়, ভারত সরকার তাদের অনুমতি দেয়নি।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সরকার বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারায় চীনা অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ভারতের সার্বভৌমত্ব, সুরক্ষা ও প্রশাসন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া ভারতের তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, নানা সূত্রে জানা গেছে, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্ল্যাটফর্মে এমন কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যায়, যেগুলো গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। এবং বেআইনিভাবে সেই তথ্য বিদেশে পাচার করে। ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো শক্তির কাছে সেই তথ্য পৌঁছায়। এর ফলে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। যে কারণে তথ্য চুরির বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
গত জুনে প্রথমে ৫৯টি চীনা অ্যাপকে ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকারক’ আখ্যা দিয়ে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অ্যাপগুলোর মধ্যে ছিল টিকটক, হেলো, উইচ্যাট, ইউসি ব্রাউজার, ইউসি নিউজ, ক্যাম স্ক্যানার, ক্ল্যাশ অব কিংস, ক্লাব ফ্যাক্টরি, বিগো লাইভ ইত্যাদি। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারা এবং ২০০৯ সালের তথ্যপ্রযুক্তি বিধির সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার আওতায় সরকার অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করেছিল।
অ্যাপ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম দি ইকনোমিক টাইমস জানিয়েছে, এবার ওই ৫৯টি চীনা অ্যাপ ভারতে পাকাপাকি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার আরো ১১৮টি অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর নভেম্বরে আরো ৪৩টি চীনা মোবাইল অ্যাপের ওপর ভারতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ভারত সরকারের এমন পদক্ষেপের পর আলিবাবার মালিকানাধীন ইউসি ব্রাউজার তাদের ভারতের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়।
এদিকে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে টিকটকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা ভারতের সরকারি পদক্ষেপ পর্যালোচনা করছেন এবং ভারত সরকারকে উপযুক্ত বক্তব্য জানাবেন।