চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমদের নিয়ে নতুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ও সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে চীন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে উইঘুর, কাজাখ ও মুসলিমরা চীনে গণআটক, নজরদারি ও নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ডিডব্লিউকে বলেন, ‘চীন মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে, তা তথ্যসহ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলো যেন সাহসী হয়ে উপায় ঠিক করে এবং চীনকে এই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করে। আমরা যে তথ্য-প্রমাণ দিয়েছি, তারপর দেশগুলোর পক্ষে চুপ করে থাকা মুশকিল।
১৬০ পাতার প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ২০১৯-এর অক্টোবর থেকে ২০২১-এর মে পর্যন্ত গবেষণা করেছে। তারা ১২৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জন চীনের উইঘুর শিবিরে ছিলেন। আর ৬৮ জন সেসব পরিবারের সদস্য, যে পরিবার থেকে কেউ হারিয়ে গেছেন বা তাদের আটক করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
রিপোর্ট বলছে, জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষকে শিবিরে পাঠানো হয়েছে। মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য চীন তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচুর সাক্ষী অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, চীন মুসলিমদের মুছে ফেলতে চায়।
অনেকে বলেছেন, মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি মসজিদে ও মুসলিমদের বাড়িতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছবি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই বলেছেন, তারা চীনে নিজেদের ধর্মাচরণ করতে ভয় পাচ্ছেন। তারা জানেন যে রাষ্ট্র তাদের নজরদারির আওতায় রাখছে।
এর আগে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও প্রায় একই ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছিল, তারা বিশ্বাস করে চীনের সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন তৈরি করা জনাথন লোয়েব বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাদের সংগঠনের গবেষণা যে গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোর সব প্রমাণ তুলে আনতে পারেনি। যা তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো খুবই সামান্য।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে উইঘুরদের প্রতি চীনের নীতিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। চীন অবশ্য উইঘুরদের বিরুদ্ধে কোনও অত্যাচারের কথা অস্বীকার করে। তাদের অভিযোগ, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের দেশগুলো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।