প্রায় দেড় বছর পর রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্কুল-কলেজ খুলছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, স্কুল প্রাঙ্গণ মুখর হবে চিরচেনা কোলাহলে। এদিনের জন্য অপেক্ষায় ছিল দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকসহ সবাই। কিন্তু এ আনন্দের সঙ্গে মিশে আছে চাপা উদ্বেগও।
গত ২ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে মতামত দেয়। এরপর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার করাসহ ১৯ দফা নির্দেশনা মেনে স্কুলগুলোকে তৈরি করতে বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গবেষক ও সংবাদকর্মী শেরিফ আল সায়ারের সন্তান বনানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। স্কুল খোলার ঘোষণায় শেরিফ তার সন্তানের সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘স্কুল কী ধরনের নিরাপত্তা পদ্ধতি নেবে তা এখনও জানি না। স্কুল থেকেও কিছু বলেনি। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যতটা সচেতন, প্রাথমিকের শিশুরা ততটা নয়। তারা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলেই একে অন্যের হাত ধরবে, পাশে বসবে-এটাই রিস্ক ফ্যাক্টর।’
গ্রিন রোডের একটি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানের মা জোহরা শিউলি। মেয়ে স্কুলে যাবে, সেই জন্য নতুন জুতো কিনেছেন। স্কুল থেকে তাকে জানানো হয়েছে, একদিনে একই শ্রেণির সব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হবে না। এ পদ্ধতি তার পছন্দ হয়েছে জানিয়ে শিউলি বলেন, সিস্টেমটা ভালো, তবে শঙ্কা একটু থাকবেই।
এ শঙ্কা মূলত উতরে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খবর। ২ সেপ্টেম্বর আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস ও চিলড্রেনস হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল খুলে দেওয়ার পরের এক সপ্তাহেই দেশটিতে প্রায় আড়াই লাখ শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে লাখ লাখ শিশু ক্লাসরুমে ফিরেছে, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে। খবরে আরও বলা হয়েছে, আগস্টেই দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয়েছে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি শিশুরা।
এদিকে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকার বিষয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, ১২ বছর কিংবা এর বেশি বয়সী শিশুদের ফাইজার কিংবা মডার্নার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক গত ৫ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
কবে নাগাদ স্কুলপড়ুয়াদের টিকা দেওয়া যাবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনা এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে আসেনি। সরকার অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বিশ্বের খুব বেশি দেশে এই বয়সের ছেলে-মেয়েদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। দুয়েকটা দেশে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। আমরাও সেই নীতি অনুসরণ করছি। ডব্লিউএইচওর সঙ্গে আলোচনা করছি। তারা বললে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
স্কুল খোলার পর সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনটাও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্কুল খোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যারা বয়সে একটু বড় তাদের বোঝানো সম্ভব। কিন্তু ছোটদের বোঝানো সম্ভব নয়। তাদের বোঝাতে সবাইকে মাঠে নামতে হবে।’
স্কুল সংলগ্ন ফুটপাতগুলোতে ফুচকা বা চায়ের দোকান রাখা যাবে না। কেউ যেন সেখানে আড্ডা না দেয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
মা-বাবাসহ যারা শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসবেন তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিনেটেড হতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক নজরুল বলেন, ‘একজন মায়ের এতদিন নিজের সন্তানকে সংক্রমিত করার ঝুঁকি ছিল। স্কুলে আসলে আরও অনেককে সংক্রমিত করার ঝুঁকি থাকবে। সেই সঙ্গে শিক্ষকসহ অন্যান্য কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরও টিকা নিতে হবে।’