মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্তগুলো না মানা পর্যন্ত তিনি ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলবেন না। সিবিএস নিউজে গতকাল রোববার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জো বাইডেন এ কথা বলেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আগে তাদের ওপর থেকে সব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়, কেবল তাহলেই চুক্তিতে ফিরবে তেহরান ।
২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর পরিবর্তে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
কিন্তু, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়ে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন। যার কারণে ইরান তাদের বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে।
ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়িয়ে চলেছে। দেশটি বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
এই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রিঅ্যাক্টর জ্বালানি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এই একই ইউরেনিয়াম পারমাণবিক বোমা তৈরিতেও ব্যবহার হয়।
পরমাণু চুক্তি কেন ভেঙে গেল?
২০১৫ সালের যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের একটি পরমাণু চুক্তি হয়েছিল।
ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কমিয়ে আনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পারমাণবিক প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতে দেবে বলে একমত হয়েছিল। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হয়।
ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নতুন একটি চুক্তিতে আসার জন্য আলোচনা করতে চাপ দেন। এরই অংশ হিসেবে ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নজরদারি রাখতে চেয়েছিলেন। এর পাশাপাশি দেশটির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উৎপাদনও থামিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প।
কিন্তু ইরান এসব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের শুদ্ধতার মাত্রা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের চেয়ে বাড়িয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করে। এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরান ঘোষণা করেছে যে তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে। অস্ত্র তৈরি করতে ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হয়।
সিবিএস নিউজে সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি তেহরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেবেন কি না। বাইডেন এক কথায় জবাব দেন, ‘না।’
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, পরমাণু চুক্তির আওতায় ইরানকে সব শর্তে ফিরিয়ে আনতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমে ‘সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে’। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি গতকাল রোববার এ খবর প্রচার করেছে।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ‘আমরা সবকিছু মূল্যায়ন করব, এবং যদি দেখা যায় তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এই বিষয়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছে, তাহলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যাব।’
‘এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, যা বদলাবে না। সব ইরানি কর্মকর্তা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন,’ যোগ করেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
বাইডেন আরো যা যা বললেন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সিবিএসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন।
বাইডেন আরো বলেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সরাসরি দ্বন্দ্বের দিকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দুটি দেশই চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে।
বাইডেন জানান, তিনি গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এখনো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। এ ছাড়া বেইজিংয়ের প্রতি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেননি বলেও জানান বাইডেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে বাইডেন বলেন, “তিনি খুব বুদ্ধিমান, খুব কঠোর। তাঁর অস্থিমজ্জার কোথাও গণতন্ত্রের ‘গ’-ও নেই।”