ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্র আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে। আগ্রাসনের পর থেকে অস্ত্র আমদানি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে পৌঁছে গেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এসআইপিআরআই) বরাতে আজ সোমবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।
অস্ত্র আমদানি নিয়ে আজ এসআইপিআরআই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ, পাঁচ বছরে ইউরোপের দেশগুলো অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ওই পাঁচ বছরে অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে ৬৫ শতাংশ।
ইউরোপজুড়ে অস্ত্র আমদানি বাড়লেও বিশ্বব্যাপী পাঁচ দশমিক এক শতাংশ আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছে এসআইপিআরআই।
অস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালানো সংস্থাটির প্রধান গবেষক পিটার ডি ওয়েজম্যান বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী অস্ত্র স্থানান্তর কমেছে। তবে, রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনার জন্য ইউরোপে স্পষ্টভাবে আমদানি বেড়েছে। রুশ আগ্রাসনের জন্য ইউরোপের দেশ ইউক্রেন দ্রুতগতিতে অস্ত্র আমদানি করছে। বিশ্বে অস্ত্র আমদানিতে তারা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।’
ওই পাঁচ বছরে ইউরোপের ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়া। আর ইউক্রেনে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
এসআইপিআরআই বলছে, ইউক্রেনে যেসব অস্ত্র যাচ্ছে এর বেশিরভাগই আগে ব্যবহৃত। এর মধ্যে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়েছে ২২৮টি আর্টিলারি ও পাঁচ হাজার গাইডেড আর্টিলারি রকেট। আর ২৮০টি ট্যাংক পাঠিয়েছে পোল্যান্ড। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য সাত হাজার ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধক পাঠিয়েছে ইউক্রেনে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি তীব্রভাবে বাড়লেও, সর্বশেষ বছরে ওয়াশিংটন অন্য চারটি দেশে রপ্তানি বেশি করেছে। ২০২২ সালে ওয়াশিংটন যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে তার মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে কুয়েত। এরপরে যথাক্রমে রয়েছে, সৌদি আরব, কাতার ও জাপান। ইউক্রেনে যেসব অস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার অধিকাংশই কম অত্যাধুনিক ও ব্যবহৃত। আর ওই চারটি দেশে অত্যাধুনিক অস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে তারা।
সর্বশেষ পাঁচ বছরে অস্ত্র রপ্তানিতে সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ৪০ শতাংশ, যা আগে ছিল ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে, অস্ত্র রপ্তানি কমলেও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে দেশটির অবদান ২২ শতাংশ থেকে কমে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এসআইপিআরআইয়ের জ্যৈষ্ঠ গবেষক সিয়েমন টি ওয়েজম্যান বলেন, ‘ইউক্রেনের আক্রমণ রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানিকে আরও সীমিত করবে। এর প্রধান কারণ, নিজেদের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিবে মস্কো। এ ছাড়া বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞায়ও এটি কমবে।’
২০২২ সালে রাশিয়ার অস্ত্র কেনার দিক থেকে সবার ওপরে ছিল মিশর। বিপুল পরিমাণে যুদ্ধবিমান কেনার অর্ডার দিয়ে রেখেছে দেশটি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এই অর্ডারে প্রভাব পড়বে।
অস্ত্র রপ্তানিতে রাশিয়ার পরেই রয়েছে ফ্রান্স। মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে দেশটির অবদান ১১ শতাংশ, যা আগে ছিল সাত দশমিক এক শতাংশ। দেশটির অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে এশিয়া প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে। ২০২২ এর শেষ নাগাদ রাশিয়ার থেকে বেশি অস্ত্রের অর্ডার পেয়েছে ফ্রান্স।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে। যথাক্রমে দেশ দুটিতে আমদানি বেড়েছে ৬১ শতাংশ ও ১৭১ শতাংশ। চীন ও উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান চাপে দেশ দুটিতে অস্ত্র আমদানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে এসআইপিআরআই।
এদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনও অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে। আগের থেকে তাদের আমদানি বেড়েছে চার দশমিক এক শতাংশ। এ আমদানির বেশির ভাগই এসেছে রাশিয়া থেকে।