ভূ-রাজনীতিতে মাঝে মাঝেই কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়া ও আফগানিস্তান এ অঞ্চলের সবচেয়ে আলোচিত মানচিত্র। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল এবং আগস্টে কাবুল পতনের পর বোঝা যাচ্ছে যে, এশিয়ার এই অঞ্চলটি ভূ-রাজনীতির নতুন ‘থিয়েটার’ হয়ে পড়েছে।
এর প্রভাব বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে অনুভূত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে টেনশন এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে স্বার্থের টানাপড়েন যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে অবধারিতভাবে এর পরিণতি সংঘাতের দিকে যাবে।
আফগান ও মিয়ানমার পরিস্থিতি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দু’টি বিরোধপূর্ণ জায়গার একটি হচ্ছে মিয়ানমার, যেখানে সংঘাতের মাত্রা কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বড় আকারের ঝামেলার জায়গা হচ্ছে আফগানিস্তান।’
তিনি বলেন, ‘সেই হিসেবে বলা যায়, এটি হচ্ছে ভূ-রাজনীতির একটি নতুন থিয়েটার।’
শহীদুল হক জানান, আফগানিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অবস্থানগত দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মাঝখানে অবস্থান করছে। আফগানিস্তানের একদিকে রয়েছে পাকিস্তান, অপরদিকে ইরান। একপাশে চীন এবং আরেক দিকে মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিজস্তান। এই দেশগুলো আগে সোভিয়েত রাশিয়ার অংশ ছিল বলে তিনি জানান।
সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ওই দেশে যা হচ্ছে আঞ্চলিকভাবে, তার কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও আসবে।’
তালেবান সমস্যা
বহির্বিশ্বের কাছে তালেবানদের একটি পরিচয় রয়েছে। সেটি হচ্ছে উগ্রবাদে বিশ্বাসী পশ্চিমাবিরোধী শক্তি। এই পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা খুবই কঠিন।
শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা যদি দেখি কাতার ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু সৌদি আরব এখনও কোনও যোগাযোগ করছে বলে জানা যায় না।’
তিনি মনে করেন,স্বল্প সময়ের জন্য বর্তমান অবস্থা হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতার জন্য সবাইকে প্রয়োজন হবে তালেবানদের।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটি বলা মুশকিল।’
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, আঞ্চলিক দেশগুলোর স্বার্থ ও বৃহৎ বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে বিষয়টি জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে (আফগানিস্তান) পশতুন, হাজারা, উজবেকসহ বিভিন্ন জাতির মানুষ বাস করে। তবে কেউ কারও অধীনে নয়। এই অবস্থায় একটি জাতীয় সরকার তালেবানরা গঠন করতে পারবে কিনা, সেটি আগামী দিনগুলোতে পরিষ্কার হবে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই অঞ্চলে পাকিস্তান, ভারত, ইরান, চীন, রাশিয়া ও রাশিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রগুলো, কাতার, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের বিভিন্নমুখী স্বার্থ রয়েছে আফগানিস্তানকে নিয়ে। ফলে এটি গোটা পরিবেশকে আরও জটিল করবে।’
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানকে ঘিরে ভূ-রাজনীতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এর ধাক্কা বাংলাদেশেও লাগবে।’