গত দুবছরের তুলনায় এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু-এর প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ কী এবং এই মুহুর্তে আমাদের কী করণীয়- এই প্রসঙ্গে কথা বলেছে ড: চিত্রা দাশের সঙ্গে।
শীতকাল কেবলই শুরু হল অস্ট্রেলিয়ায়, কিন্তু এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে ফ্লু-এর প্রকোপ অনেক বেশি।
বিশেষ করে গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ।
এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী এবং ফ্লু নিয়ে আমরা কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি, এসব নিয়ে কথা বলেছে ড: চিত্রা দাশের সঙ্গে।
ড: চিত্রা নিউ সাউথ ওয়েলসে কর্মরত একজন জিপি কনসালটেন্ট।Dr Chitra Das, GP Consultant, NSW.Dr Chitra Das
আগের দুবছরের চেয়ে হঠাৎ ফ্লু বেড়ে যাবার কারণ কী?
গত দুই বছর কোভিড-১৯ এর কারণে সব স্টেটেই বিভিন্ন মাত্রার লকডাউন চালু ছিল। সেই সাথে উন্মুক্ত চলাফেরায়ও নানা রকম বিধিনিষেধ ছিল।
অনেকেই বাসা থেকে কাজ করেছেন, স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেও অনলাইনে পড়াশোনা চালু করা হয়েছিল।
বাড়ির বাইরে যেতে হলে সবাইকে মাস্ক পরতে হতো, সোশাল ডিস্ট্যান্সিং মানতে হতো। যে কারণে ফ্লু থাকলেও সেটা ছড়ানোর সুযোগ পেয়েছে কম।
কিন্তু এ বছর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাফেরা বেড়েছে, এবং ফ্লু ছড়ানোর সুযোগও বেড়েছে।
ড: চিত্রা দাশ মনে করেন, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এ বছর থেকে আবার চালু হওয়াটাও এবারে ফ্লু-এর প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ফ্লু এবং কোভিডের উপসর্গ কীভাবে আমরা আলাদা করতে পারি?
এই দুই রোগের উপসর্গ খুবই কাছাকাছি, যেমন- ঠান্ডা বা সর্দি লাগা, জ্বর হওয়া। কিন্তু এই দুটি রোগের স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রায় অনেক পার্থক্য রয়েছে।
ড: চিত্রা মনে করেন, উপসর্গ নিয়ে না ভেবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করানোটাই হবে সবচেয়ে সঠিক কাজ।
এখন অনেক মেডিক্যাল সেন্টারেই একই সাথে ফ্লু এবং কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করানোর সুবিধা রয়েছে।
ফ্লু প্রতিরোধে আমাদের কী করা উচিৎ?
ফ্লু ভ্যাকসিন এই মুহুর্তে সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা।
ড: চিত্রা বলেন, ফ্লু এর অনেকগুলো স্ট্রেইন থাকলেও সবচেয়ে ক্ষতিকর যে চারটি স্ট্রেইন রয়েছে, ফ্লু ভ্যাকসিন সেগুলো প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই ফ্লু ভ্যাকসিন দেয়া একটি ভাল পদক্ষেপ।
দেশের কয়েকটি স্টেটে অধিবাসীদের জন্যে ফ্লু ভ্যাকসিন ফ্রি করে দেয়া হয়েছে।
যাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেয়া আছে, তাদেরও কি ফ্লু ভ্যাকসিন দিতে হবে?
অবশ্যই। ফ্লু ভ্যাকসিন ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দুটি আলাদা টীকা।
ড: চিত্রা বলেন, “এদের উপসর্গ কাছাকাছি হলেও দুটি ভিন্ন রোগ এবং এদের ভাইরাসও ভিন্ন। তাই এদের ভিন্নভাবে দেখতে হবে, ভিন্নভাবে ম্যানেজ করতে হবে। এদের টীকা-ও আলাদা।“
ফ্লু বিষয়ে আমরা আর কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি?
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সাধারণ নির্দেশাবলী ফ্লু-এর ক্ষেত্রেও কাজে দিবে। যেমন, ফ্লু হলে কিছুটা সোশাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে চলা, সম্ভব হলে বাড়িতেই অবস্থান করা, এরকম কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
ড: চিত্রা আরও বলেন, “হ্যান্ড হাইজিন বা নিয়মিত হাত ধোয়া খুব কার্যকরী হতে পারে ফ্লু না-ছড়ানোর জন্যে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ যে কোনও ইনফেকশানেই আমাদের শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়, তাই পানি পান করাটা খুবই জরুরী।“
এবং যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।