শিশুদের ফস্টার কেয়ারে নেবার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন পারিবারিক সহিংসতা, শিশুর অযত্ন-অবহেলা বা তার উপর শারীরিক অত্যাচার। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিপালক বা ফস্টার প্যারেন্টস এর ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এই সেটলমেন্ট গাইডে অস্ট্রেলিয়ায় শিশু প্রতিপালন ব্যবস্থা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ফস্টার কেয়ারার বা প্রতিপালকারীরা শিশু ও তরুনদের নিরাপদ, স্থিতিশীল ও যত্নশীল পারিবারিক পরিবেশে লালন পালন করে থাকেন। পারিবারিক স্নেহের উষ্ণতাবঞ্চিতরা সেখানে কয়েক মাস, বছর এমনকি সারাজীবন থাকতে পারে।
মনিকা (ছদ্মনাম) এবং তার স্বামীর তিনজন প্রতিপালিত সন্তান আছে যারা একই জন্মদাত্রী মায়ের সন্তান। ডিপার্টমেন্ট তাদেরকে সর্বোচ্চ দশ বছর বয়সী পর্যন্ত শিশু প্রতিপালনের অনুমতি দিলে তারা সাত মাস বয়সী এক ছেলে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব নেন। পর্যায়ক্রমে তারা সেই ছেলেটির বাকি তিন-ভাইবোনদের প্রতিপালন করার দায়িত্ব নেন। Pexels/Karolina Grabowska
‘এডপট চেঞ্জ’ সংস্থাটি দেশজুড়ে শিশু প্রতিপালন বিষয়ে কাজ করে থাকে। এই সংস্থাটির চিফ একজিকিউটিভ অফিসার রেনি কার্টার জানান, অস্ট্রেলিয়া জুড়ে পালক অভিভাবকের ঘাটতি আছে।
যেসব শিশু নিজের বাবা মায়ের কাছে থাকতে পারে না, সরকার তাদের বিকল্প আশ্রয় খুঁজে দেয়। সারা দেশ জুড়ে এমন শিশুর সংখ্যা ৪৬ হাজার। তারা পারিবারিক পরিবেশের বিকল্প আশ্রয় — ‘আউট অফ হোম কেয়ারে’ থাকে। এই আউট অফ হোম কেয়ারের মধ্যে ফস্টার কেয়ার বা প্রতিপালনকারী অভিভাবক, কিনশিপ কেয়ার বা শিশুর আত্মীয়দের তত্ত্বাবধান এবং এতিমখানা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অনেক সময় শিশুর সংস্কৃতিগত ভিন্নতা অনুযায়ী তেমন ভাষা ও সংস্কৃতির পালক পিতা-মাতার দরকার হয়। ‘বিনেভলেন্ট সোসাইটি’ সংস্থাটি বৃহত্তর সিডনীতে ‘ফস্টারিং ইয়ং লাইভস’ কর্মসূচির মাধ্যমে ‘আউট অফ হোম কেয়ার’ সেবা দিয়ে আসছে। নিজের বাবা মায়ের আদর-যত্ন বঞ্ছিত শিশুদেরকে এই সংস্থাটি উপযুক্ত প্রতিপালনের জায়গা খুঁজে দেয়। সংস্থাটির ম্যানেজার আলানা হিউজেস জানান,
বিভিন্ন কারণে শিশুদের বিকল্প প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হয়। স্বল্পকাল বা দীর্ঘকালের জন্য শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের স্বার্থে আসল বাবা মায়ের কাছ থেকে তাদের আলাদা রাখতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর নিরাপত্তাই বড় কারণ হিসাবে দেখা যায়।
Pixabay/Pexels
মিস কার্টার বলেন, অনেক শিশু হয়তো বড় কোন আঘাত পেয়েছে বা ট্রমার শিকার হয়েছে; সেরে উঠার জন্য তাদের একটা সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশের দরকার, পরিবারের আদর-যত্নের দরকার।
মিস হিউজেস জানান অস্ট্রেলিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিপালন সেবার ব্যবস্থা আছে: স্বল্পকালীন জরুরি প্রতিপালক, দীর্ঘকালীন প্রতিপালক যারা এক পর্যায়ে শিশুদের পালক অভিভাবক হতে ইচ্ছুক— এমন বিভিন্ন ধরনের ফস্টার কেয়ার পরিষেবা দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্য এবং টেরিটরি ভেদে প্রতিপালন নেবার প্রক্রিয়া আলাদা। কোন কোন রাজ্যে প্রতিপালকেরা সরকারী বিভাগের সাথে কাজ করেন, কোথাও বা ফস্টার কেয়ার এজেন্সির সাথে।
তবে আবশ্যক পদক্ষেপগুলো সব রাজ্যে একই হয়ে থাকে। প্রতিপালক সেবা বিষয়ক প্রাথমিক তথ্য পেতে হলে স্থানীয় এজেন্সিগুলোতে খোঁজ নিতে হয়। মিস হিউজেস জানান, এনএসডব্লিউতে স্থানীয় এজেন্সিগুলো পালক অভিভাবকত্ব প্রদান করে থাকে। অবশ্য শিশুর বাস্তবিক প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত প্রতিপালনকারীর কে হবেন তার সিদ্ধান্ত দিতে পারে কেবল ডিপার্টমেন্ট অফ কমিউনিটিস এন্ড জাস্টিস। ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে উপযুক্ত প্রতিপালক খুঁজে শিশুকে তার পালক হিসাবে নিযুক্ত করে।Pexels/Josh Willink
ফস্টার কেয়ারার বা প্রতিপালক হতে হলে নিউ সাউথ ওয়েলসে কিছু প্রাথমিক শর্ত পুরণ করা আবশ্যক, যেমন তাকে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং তাকে বয়সে ২৫ বছরোর্ধ্ব হতে হবে। মিস হিউজেস এ বিষয়ে জানান,
উপরোক্ত প্রাথমিক যোগ্যতা পূরন হলে ফস্টার কেয়ারার প্রার্থীকে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এজেন্সির মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হলে তাকে প্রতিপালক হিসাবে গণ্য করা হয়।
মিস হিউজেস জানান, অনেক সময় স্বল্পকালীন প্রতিপালনের জন্য নিয়ে আসা শিশু প্রতিপালকের কাছে দীর্ঘকালের জন্য থেকে যায়। কিছু ফস্টার প্যারেন্টস এক পর্যায়ে আজীবনের জন্য শিশুর দায়িত্ব নিয়ে নেন বা অভিভাবকত্ব নিয়ে গ্রহণ করেন।
মনিকা স্বীকার করেন স্বল্পকালের জন্য কারোর অভিভাকত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারটা শুরুতে মেনে নিতে তার কষ্ট হয়েছিল। Stocksnap/Pixabay
মিস হিউজেস বলেন, শিশুর সর্বাঙ্গীন কল্যাণ, মানসিক স্বাস্থ্য সহ তার মানবিক বিকাশের নেওয়ার জন্য যা যা দরকার তা দিতে প্রতিপালক এবং এজেন্সি একসাথে কাজ করেন। ফস্টার কেয়ারিং মানে তাই কেবল শিশুকে আশ্রয় দেওয়া নয়, বরং তার সবকিছুর দায়িত্ব নেওয়া।
অনেক ক্ষেত্রেই পালক অভিভাবকদের শিশুর আসল বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় এবং শিশুর সাথে তাদের নিয়মিত সংযোগ রক্ষা করতে হয়। মিস কার্টার বলেন, শিশু প্রতিপালনের গুরুদায়িত্ব আনন্দেরও বটে। শিশুর বেড়ে উঠার সময়, তার লালন পালনের মধ্য দিয়ে প্রতিপালকেরা সেই আনন্দ লাভ করেন।
আপনার বা আপনার পরিচিত কারোর পারিবারিক সহিংসতায় সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে কল করুন ডমেস্টিক ভায়োলেন্স হেল্প লাইন ১৮০০ ৬৫৬ ৪৬৩ অথবা চাইল্ড প্রটেকশন হেল্পলাইন ১৩২ ১১১ নাম্বারে।