অস্ট্রেলিয়ায় খাদ্যে অ্যালার্জির হার সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। ফুড অথরিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস এর মতে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন এবং প্রতি ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে প্রায় ২ জনের ফুড অ্যালার্জি রয়েছে। অ্যালার্জি এবং অ্যানাফিল্যাক্সিস আক্রান্ত শিশুদের স্কুলে পাঠানো অনেক বাবা-মার জন্যই উদ্বেগজনক হতে পারে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসা অধিবাসীদের জন্য, যাদের এখানকার নিয়ম ও নির্দেশিকা সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা নাও থাকতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চাইল্ডকেয়ারে শিশুদের অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ তাদের বাবা-মা, স্কুল এবং চিকিত্সকদের মধ্যে যোগাযোগের উপর নির্ভর করে।
অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যানাফিল্যাক্সিস অস্ট্রেলিয়ার সিইও মারিয়া সাইদ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্কুলে অ্যালার্জি বেশ ভালভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এবং এটি শুরু হয় অ্যালার্জি নিয়ে জানাশোনা রয়েছে এরকম কোনও বিশ্বাসযোগ্য স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে।
অ্যালার্জি বা অ্যানাফিল্যাক্সিস আক্রান্ত শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাইল্ডকেয়ারে পাঠানোর সময় বাবা-মায়েদের জন্যে সন্তানের এ সংক্রান্ত সব তথ্য ও একটি কর্মপদ্ধতি বা অ্যাকশান প্ল্যান জানিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
অ্যাকশন প্ল্যান একটি মেডিকেল ডকুমেন্ট, যেটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্পষ্ট এবং প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করে। এই তথ্যগুলো শিশুর ডাক্তার বা নার্সের দ্বারা পূরণ ও স্বাক্ষরিত হতে হয়।
ড: কেটি ফ্রিথ সিডনি চিলড্রেনস হসপিটালের একজন পেডিয়াট্রিক ইমিউনোলজিস্ট এবং অ্যালার্জিস্ট।
অ্যাকশন প্ল্যানগুলি ASCIA ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। এগুলির বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত সংস্করণও সেখানে পাওয়া যায়।
অ্যাকশান প্ল্যানগুলি সাধারণত মেয়াদোত্তীর্ণ হয় না, তবে সেগুলো প্রায়শই পর্যালোচনা করে হালনাগাদের প্রয়োজন হতে পারে। এ বিষয়ে সাধারণত ডাক্তাররাই সিদ্ধান্ত নেয়।
Preschool kids Credit: Getty / skynesherগত বছর অস্ট্রেলিয়ায় স্কুল ও চাইল্ডকেয়ারে অ্যানাফিল্যাক্সিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশব্যাপী একটি বেস্ট প্র্যাকটিস গাইডলাইন চালু করা হয়েছে।
মিজ সাইদের মতে, নির্দেশিকাগুলির মূল বার্তা হচ্ছে ডিম ও বাদামের মত খাদ্যগুলোকে গণহারে নিষিদ্ধ না করে বরং অ্যালার্জি সম্পর্কে সচেতন করা। ওরকম নিষেধাজ্ঞা অ্যালার্জি বিষয়ে ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধের জন্ম দেয়।
নোভিয়া চ্যানের ছেলে ট্রিস্টেনের বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, সামুদ্রিক খাবার এবং বাদামের মতো অনেক খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে। ছেলেকে তার অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করা এবং নিয়মকানুন মেনে চলার শিক্ষা দেয়া নোভিয়া চ্যানের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Checking label ingredients at supermarketট্রিস্টেনের স্কুলের শ্রেণীকক্ষে অ্যাকশান প্ল্যানগুলি টাঙানো থাকে যেন তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা তার অ্যালার্জি বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে। এগুলি শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিকভাবেই অ্যালার্জি সম্পর্কে শিখতে এবং তাদের খাবারে কী কী উপাদান রয়েছে সে বিষয়ে সচেতন হতে সহায়তা করে।
মিজ সাইদ বলেন, বাবা-মা এবং স্কুল-কর্মীদের “একসাথে কাজ করা” এবং সমস্ত শিশুদের তাদের বয়স অনুযায়ী এ বিষয়ক দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যাকশান প্ল্যানে উল্লেখিত ঔষধ সরবরাহ করাও বাবা-মায়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
স্কুলগুলিতে প্রতিটি অ্যালার্জিক শিক্ষার্থীর জন্য একটি জরুরী বা “এমারজেন্সি কিট” থাকে, যার মধ্যে তাদের অ্যাকশান প্ল্যান এবং ঔষধ রাখা হয়।
ঔষধের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখগুলি লিখে রাখা জরুরি, কারণ কোনও শিক্ষার্থীর ঔষধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে শিক্ষা-ভ্রমণ ও অন্যান্য কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
ড: ফ্রিথ বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় এপিপেন বা অ্যানাপেনের মত অ্যাড্রেনালিন ইনজেক্টর কেনার জন্যে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এভাবে এগুলো কেনা ব্যয়বহুল হতে পারে। প্রতিটি ইনজেক্টরের দাম প্রায় ৭৫ ডলার থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
প্রথমবার পিবিএস অথরিটি প্রেসক্রিপশনটি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে নেয়া উচিৎ। তারপর থেকে জিপি বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার ডাক্তাররাও এই ঔষধগুলো লিখে দিতে পারেন।
গত বছরে কোভিড মহামারীর কারণে অ্যাড্রেনালিন ইনজেক্টরের দেশব্যাপী ঘাটতি দেখা গিয়েছিল। ড: ফ্রিথ তাই তাঁর রোগীদের মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেক্টরগুলি ফেলে না দিয়ে বরং আপাতত রেখে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অ্যালার্জিক শিশুদের স্কুল বা চাইল্ডকেয়ারে পাঠানো বাবা-মায়ের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। তবে সন্তানের সাথে সাথে স্কুলের সঙ্গেও কার্যকরী যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদেরকে অ্যালার্জি সম্পর্কে সচেতন করা এই ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।